প্রশ্ন: যে সকল অবস্থায় স্থাবর সম্পত্তির সার্টিফিকেট জারীর নিলাম রদ বা দখল পুনঃরুদ্ধারের জন্য দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করা যায় তা বিস্তারিত আলোচনা করুন।
সরকারী দাবী আদায় আইন, ১৯১৩ এর ৩৪ ধারার বিধান সাপেক্ষে একটি সার্টিফিকেট নাকোচের জন্য দেওয়ানী আদালতে মামলা করা যায়।
ধারা-৩৪ এ বলা হয়েছে যে, সার্টিফিকেট খারিজ বা সংশোধনের নিমিত্তে এবং প্রাপ্য অতিরিক্ত কোন আনুসঙ্গিক প্রতিকার লাভের উদ্দেশ্যে সার্টিফিকেট দেনাদার—
(১) তার উপরে ৭ ধারার নোটিশ জারী হবার তারিখ হতে; অথবা
(২) এই আইনের ৯ ধারামতে দায় অস্বীকারমূলক আবেদন দাখিল করলে উক্ত আবেদনের নিষ্পত্তির তারিখ হতে; অথবা
(৩) ১০ ধারায় বর্ণিত আদেশের বিরুদ্ধে ৫১ ধারা অনুযায়ী আপীল দায়ের করলে উক্ত আপীলের রায় এর তারিখ হতে ৬ মাস এর মধ্যে যেকোন সময়ে দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে পারবেন।
তবে শর্ত হল, অনুরূপ কোন মামলাই আদালত গ্রহণ করবেন না যদি—-
(ক) ৯ ধারা অনুযায়ী সার্টিফিকেট দেনাদার দায় অস্বীকারমূলক আবেদন করে না থাকেন, যে কারণের দ্বারা তিনি সার্টিফিকেটি নাকচ বা সংশোধন করার দাবী উত্থাপন করেন তা তার আবেদন পত্রে উল্লেখ না করে থাকেন এবং অনুরূপ ত্রুটি বিচ্যুতির সঙ্গত কারণ ছিল বলে আদালতকে সন্তুষ্ট করতে না পারেন; অথবা
(খ) প্রথম তফসিলের ১ অনুচ্ছেদ বা ২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত কোন পাওনা আদায়ের সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট দেনাদার সার্টিফিকেটের অধীন পাওনা অর্থ—
অ) ৭ ধারায় এয়োজনীয় নোটিশ জারীর ত্রিশ দিনের মধ্যে; অথবা
আ) ৯ ধারা অনুযায়ী দায় অস্বীকামূলক আবেদন করলে উক্ত আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে; অথবা
ই) এই আইনের ৫১ ধারার বিধানমতে আপীল করলে আপীলের রায় এর তারিখ হতে ত্রিশ দিনের মধ্যে।
এছাড়া ৫১ ধারা মতে যদি কোন আপীল দায়ের করা হয়, তবে আপীল নিষ্পত্তির তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে যে কোন সময়ে উক্ত সার্টিফিকেট দেনাদার সার্টিফিকেট নাকোচ করার জন্য মামলা রুজু করতে পারেন।
৩৫ ধারার বিধান মতে নিম্নলিখিত কারণে আদালতে সার্টিফিকেট নাকচ করতে পারেন—
ক) সার্টিফিকেট স্বাক্ষরিত হবার পূর্বে প্রাপ্য সকল অর্থ পরিশোধিত হলে;
খ) সার্টিফিকেটে উল্লেখিত অর্থের জন্য দেনাদার দায়ী না থাকলে;এবং
গ) সার্টিফিকেট কার্যক্রম পরিচালনায় কালেক্টর বা অন্য কোন সরকারী কর্মচারী আইনের পরিপন্থী কাজ করে থাকলে এবং এজন্য দেনাদারের ক্ষতি হলে।
এছাড়া সার্টিফিকেট কার্যক্রম প্রবঞ্চনা দোষে দুষ্ট হলে ৩৭ ধারার বিধান সাপেক্ষে আদালত সার্টিফিকেট নাকোচ করতে পারেন।
বিক্রয় রদ
সরকারী দাবী আদায় আইনের ২২ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সার্টিফিকেট জারীতে কোন স্থাবর সম্পত্তি নিলাম হলে দেনাদার বা উক্ত সম্পত্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিলাম বিক্রির তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে নিম্নলিখিত অর্থ জমা দিয়ে বিক্রি রদের জন্য সার্টিফিকেট অফিসারের নিকট আবেদনপত্র পেশ করতে পারেন—
ক) নিলাম বিক্রির টাকা এবং ৬.২৫% হারে সুদসহ মূল টাকা;
খ) নিলাম ক্রেতার প্রাপ্য ক্রয়-মূল্যের ৫% হারে ক্ষতিপূরণ, কিন্তু তা কোন অবস্থায় এক টাকার কম নয়;
গ) সংশ্লিষ্ট জোত জমা বাবদ কালেক্টরের নিকট দেয় অন্যান্য সরকারী পাওনা থাকলে তা। এভাবে আবেদনপত্র পেশ করার পর সার্টিফিকেট অফিসার বিক্রি রদ করতে পারেন।
২৩ ধারার বিধান বলে দেনাদার বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ৭ ধারার নোটিশ না পাবার কারণ দেখায়ে বিক্রির ৬০ দিনের মধ্যে উক্ত বিক্রি রদ করার জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অফিসারকে নিশ্চিত হতে হবে যে, ১) ৭ ধারার নোটিশ জারী না হবার কারণে আবেদনকারীর যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে এবং ২) দেনাদার বা আবেদনকারী সার্টিফিকেটে বর্ণিত পাওনা পরিশোধ করেছে।
২৩ ধারার (২) উপধারা মতে, ৬০ দিন পরেও নিলাম বিক্রি রদের আবেদন করা যেতে পারে যদি এ সময়ের মধ্যে দাখিল না করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখানো যায়। ২৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, নিলাম ক্রেতা ৬০ দিনের মধ্যে যদি সার্টিফিকেট দেনাদারের কোন স্বত্ব ছিল না বা দেনাদারের এরূপ কোন সম্পত্তির অস্তিত্ব ছিল না তাহলে সার্টিফিকেট অফিসার উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে উক্ত নিলাম বিক্রি রদ করতে পারবেন।
৭ ধারার নোটিশ জারী হয় নি এবং এজন্য দেনাদারের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে, এ অজুহাতে ৩৬ ধারা অনুযায়ী দেওয়ানী আদালতে বিক্রি রদের মামলা করা যায়। সার্টিফিকেট কার্যক্রমে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হলে, ৩৫ ধারার বিধান মতে দেওয়ানী আদালত বিক্রি নাকোচ করে দিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্ত পূরণ করতে হবে—
ক) সার্টিফিকেট স্বাক্ষরিত হবার পূর্বেই সার্টিফিকেটে বর্ণিত সমুদয় প্রাপ্য পরিশোধিত হতে হবে;
খ) সার্টিফিকেটে উল্লিখিত কোন অর্থ দেনাদারের কাছে পাওনা থাকবে না;
গ) কালেক্টর বা অন্য কোন সরকারী কর্মচারী আইনের পরিপন্থী কোন কাজ করে থাকলে এবং এজন্য দেনাদারের ক্ষতি হলে।
উল্লেখ্য যে, এই আইনের ৪৯ ও ৫৭ ধারা অনুযায়ী সার্টিফিকেট অফিসার একটি দেওয়ানী আদালত। তাই তার নিকট মামলা করলেও দেওয়ানী আদালতে মামলা করা হিসেবে গণ্য হবে।
0 Comments