প্রজাতন্ত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং নিয়োগ
(Recruitment & Appointment in the Republic)
সরকারি নিয়োগের সাংবাধিনিক নিশ্চয়তা
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সকল নাগরিকের প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের নিশ্চয়তা প্রদান করেনি। তবে সংবিধানের ২৯ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে,‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।' অর্থাৎ প্রত্যেক নাগরিকের সংশ্লিষ্ট চাকরির বা পদের নির্ধারিত যোগ্যতা থাকার শর্তে সরকারী নিয়োগলাভে সমান সুযোগ প্রাপ্য। কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ- লাভের অযোগ্য হবেন না কিংবা সেই কারণে তাঁহার প্রতি বৈষম্য করা যাবে না।
সরকারি নিয়োগলাভে সকল নাগরিককে সমান সুযোগ না দিয়ে কোনরূপ বৈষম্য করা হলে উক্ত বৈষম্যের জন্য হাইকোর্টে রিট করা যাবে। তবে প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মে সরাসরি নিয়োগে সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণের অনুমতি প্রদান করেছেন—
(ক) নাগরিকদের কোন অনগ্রসর অংশের জন্য;
(খ) কোন ধর্মীয় বা উপ-সম্প্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মালম্বী বা উপসম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য; এবং
(গ) কর্মের বিশেষ প্রকৃতির কারণে উক্ত কর্মটি কেবল নারী বা পুরুষের জন্য উপযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে কেবল নারী বা পুরুষের জন্য।'
তাছাড়া, General Manager. South Railways Vs. Rangachari, AIR 1962 SC 86 মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে, ‘নিয়োগ পরবর্তী চাকরি ও চাকরির শর্তাদি নিয়োগের ধারাবাহিক ফল বিধায় সুযোগের এই সমতা নিয়োগ পূর্ব এবং নিয়োগ পরবর্তী চাকরির শর্তাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’
বাংলাদেশের সংবিধানের নবম ভাগে ১৩৩ অনুচ্ছেদ হতে ১৩৬ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত (প্রথম পরিচ্ছেদ-কর্মবিভাগ) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ ও শর্তাবলী ইত্যাদি প্রসংগে দিক যেসব নির্দেশনা রয়েছে তা নিচে তুলে ধরা হলো—
অনুচ্ছেদ-১৩৩::নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী:
‘এই সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন:
তবে শর্ত থাকে যে, এই উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা বা অধীন বিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করিয়া বিধিসমূহ-প্রণয়নের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং অনুরূপ যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে অনুরূপ বিধিসমূহ কার্যকর হইবে।’
অনুচ্ছেদ-১৩৪::কর্মের মেয়াদ:
‘এই সংবিধানের দ্বারা অন্যরূপ বিধান না করা হইয়া থাকিলে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির সন্তোষানুযায়ী সময়সীমা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।’
অনুচ্ছেদ-১৩৫::অসামরিক সরকারী কর্মচারীদের বরখাস্ত প্রভৃতি:
‘(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে অসামরিক পদে নিযুক্ত কোন ব্যক্তি তাঁহার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ-অপেক্ষা অধস্তন কোন কর্তৃপক্ষের দ্বারা বরখাস্ত বা অপসারিত বা পদাবনমিত হইবেন না।
(২) অনুরূপ পদে নিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে তাঁহার সম্পর্কে প্রস্তাবিত ব্যবস্থাগ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবার যুক্তিসঙ্গত সুযোগদান না করা পর্যন্ত তাঁহাকে বরখাস্ত বা অপসারিত বা পদাবনমিত করা যাইবে না:
তবে শর্ত থাকে যে, এই দফা সেই সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না, যেখানে
(অ) কোন ব্যক্তি যে আচরণের ফলে ফৌজদারী অপরাধে দণ্ডিত হইয়াছেন, সেই আচরণের জন্য তাঁহাকে বরখাস্ত, অপসারিত বা পদাবনমিত করা হইয়াছে; অথবা
(আ) কোন ব্যক্তিকে বরখাস্ত, অপসারিত বা পদাবনমিত করিবার ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কোন কারণে- যাহা উক্ত কর্তৃপক্ষ লিপিবদ্ধ করিবেন- উক্ত ব্যক্তিকে কারণ দর্শাইবার সুযোগদান করা যুক্তিসঙ্গতভাবে সম্ভব নহে; অথবা
(ই) রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে উক্ত ব্যক্তিকে অনুরূপ সুযোগদান সমীচীন নহে।
(৩) অনুরূপ কোন ব্যক্তিকে এই অনুচ্ছেদের (২) দফায় বর্ণিত কারণ দর্শাইবার সুযোগদান করা যুক্তিসঙ্গতভাবে সম্ভব কি না, এইরূপ প্রশ্ন উত্থাপিত হইলে সেই সম্পর্কে তাঁহাকে বরখাস্ত, অপসারিত বা পদাবনমিত করিবার ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে।
(৪) যে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি কোন লিখিত চুক্তির অধীন প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত হইয়াছেন এবং উক্ত চুক্তির শর্তাবলী-অনুযায়ী যথাযথ নোটিশের দ্বারা চুক্তিটির অবসান ঘটান হইয়াছে, সেই ক্ষেত্রে চুক্তিটির অনুরূপ অবসানের জন্য তিনি এই অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্যসাধনকল্পে পদ হইতে অপসারিত হইয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে না।’
অনুচ্ছেদ-১৩৫::কর্মবিভাগ-পুনর্গঠন:
‘আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মবিভাগসমূহের সৃষ্টি, সংযুক্তকরণ ও একত্রীকরণসহ পুনর্গঠনের বিধান করা যাইবে এবং অনুরূপ আইন প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোন ব্যক্তির কর্মের শর্তাবলীর তারতম্য করিতে ও তাহা রদ করিতে পারিবে।’
নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নির্ধারণ
সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী সংসদের আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণের এবং উক্তরূপ আইন প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করিয়া বিধিসমূহ প্রণয়নের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে প্রদান করা হইয়াছে।"
সংবিধানের উক্ত ক্ষমতাবলে কতিপয় চাকরি বা পদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী সংক্রান্ত কতিপয় আইন প্রণীত হলেও উক্ত আইনসমূহে চাকরির সকল শর্তাবলী সন্নিবেশিত নেই। তাছাড়া অধিকাংশ চাকরি বা পদের ক্ষেত্রেই অদ্যাবধি কোন আইন প্রণয়ন করা হয়নি। ফলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী সংক্রান্ত অর্থাৎ নিয়োগ, জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা, আচরণ, পেনশন ইত্যাদি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধি প্রণয়ন করেছেন।
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা-৭ তে নিয়োগ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে-
''(১) এই আইনের আওতাভুক্ত কোনো কর্ম বা কর্মবিভাগে সরাসরি জনবল নিয়োগের ভিত্তি হইবে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা।
নিয়োগ বিধি প্রণয়ন ও অনুসরণ
স্থায়ী বা অস্থায়ী প্রতিটি পদেরই নিয়োগ বিধিমালা থাকিতে হইবে। উক্তরূপ নিয়োগ বিধি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং কর্ম কমিশনের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রণয়ন করিবে এবং বাংলাদেশ গেজেটে তাহা প্রকাশ করিবে।(Personnel Manual-4.14)
প্রতিটি সরকারী দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর এর নিজস্ব নিয়োগ বিধি রহিয়াছে। সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের শর্তাংশে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি উক্ত সংবিধানের ১৪০(২) অনুচ্ছেদের বিধানমতে নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করেন এবং উক্তভাবে প্রণীত নিয়োগ বিধিতে বর্ণিত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ বিধিতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকিলে এক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিধি অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োগযোগ্য হইবে না।(নং-সম (বিধি-১)এস-১/২০০৭-২১, তারিখঃ ২৭ জানুয়ারি, ২০০৮)
যে সকল চাকরি বা পদের জন্য সংসদ কর্তৃক আইন প্রণীত হয় নাই উক্ত চাকরি বা পদের জন্য সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের শর্তাংশে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করেন। এছাড়া যে সকল চাকরি বা পদের জন্য আইন প্রণীত হয়েছে, ঐ সকল চাকরি বা পদের জন্য উক্ত আইনে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আইনে বর্ণিত কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করেন। এইরূপে প্রণীত নিয়োগ বিধি অনুসরণপূর্বকই কেবল নিয়োগ করা যায়। তবে যে সকল আইনে কোন সুনির্দিষ্ট পদের নাম উল্লেখপূর্বক উক্ত পদে নিয়োগের পদ্ধতি ও শর্তাবলী বর্ণিত হইয়াছে, উক্ত পদ নিয়োগ বিধির তফসিলে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ নেই।
নিয়োগ বিধিতে অন্তর্ভুক্ত নেই, এমন কোন নতুন পদ সৃষ্টি করা হলে উক্ত পদটি সংশ্লিষ্ট অফিসের নিয়োগ বিধিতে অন্তর্ভুক্ত না করা পর্যন্ত উক্ত সৃষ্ট পদে নিয়োগ প্রদান করার কোন বিধিগত সুযোগ নেই। কারণ সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের বিধানমতে আইনের অবর্তমানে রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী বিধি দ্বারা নির্ধারণের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে যে নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, তা বিদ্যমান নিয়োগ বিধিতে অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারণে পদটিতে নিয়োগের যোগ্যতা ও কর্মের অন্যান্য শর্তাবলী নির্ধারিত হয় নেই। ফলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ নিজের ইচেছমতো বা অন্য কোন অফিসের নিয়োগ বিধি অনুসরণপূর্বক নিয়োগ যোগ্যতা নির্ধারণ করতঃ নিয়োগ প্রদান করলে তা সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের বিধানের পরিপন্থি হবে। তাছাড়া নিয়োগ বিধিতে যে পদের জন্য যে যোগ্যতা নির্ধারিত আছে, এর ব্যতিক্রমপূর্বক কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি কিংবা নিয়োগ প্রদান সংবিধানের উক্ত অনুচ্ছেদের বিধানের পরিপন্থি।
কোন পদে নিয়োগ বিধির বিধান অনুসরণপূর্বকই নিয়োগ বিধিতে সংজ্ঞায়িত নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ নিয়োগদানের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। নিয়োগ বিধিতে উল্লেখ নেই এমন নবসৃষ্ট পদ নিয়োগ বিধিতে অন্তর্ভুক্ত না করে নবসৃষ্ট পদে নিয়োগদানের সুযোগ নেই।(সম (বিধি-১)-এস-১১/২০০০-১১১, তারিখঃ ০৩ এপ্রিল, ২০০২) নবসৃষ্ট পদ নিয়োগ বিধিতে অন্তর্ভুক্তির পূর্বে পদোন্নতি বা সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করার সুযোগ নেই।(সম (বিধি-১)এস-৯/২০০৮-২৬, তারিখঃ ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯) বিদ্যমান নিয়োগ বিধির তফসিলে যে পদসমূহ অন্তর্ভুক্ত নাই, সে পদসমূহে কোন লোক/জনবল নিয়োগ করা যাইবে না।"
নিয়োগ বিধি ব্যতীত কোন পদে নিয়োগ/পদোন্নতি প্রদানের সুযোগ নেই। খসড়া নিয়োগ বিধি অনুসরণযোগ্য নয়।” বিদ্যমান নিয়োগ বিধির তফসিলে অন্তর্ভুক্ত নাই এমন নতুন সৃষ্ট পদ নিয়োগ বিধির তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতঃ তদানুযায়ী উক্ত পদগুলি পূরণ করা যাবে।"
পদটি কেবল পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য হলে এবং নিয়োগ বিধিতে উক্ত পদে সরাসরি নিয়োগের বিধান না থাকিলে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী না পাওয়ার ক্ষেত্রেও উক্ত পদটি সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের সুযোগ ্নেই।
নিয়োগ বিধি ব্যতীত খসড়া নিয়োগ বিধি অনুসরণ করে রাজস্ব খাতে কোন সরকারী পদ সরাসরি/পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের বিধিগত সুযোগ নাই।
তা ছাড়া অন্য কোন অফিসের নিয়োগ বিধি অনুসরণ পূর্বক নিয়োগ প্রদানের বা শূন্য পদ পূরণের সুযোগ নাই। ১"
অনুমোদিত নিয়োগ বিধি ব্যতীত খসড়া নিয়োগ বিধির বিধান অনুযায়ী শূন্য পদ পূরণ করা যাবে না।
নিজস্ব নিয়োগ বিধির বিধান অনুসরণযোগ্য। কোন পদের ক্ষেত্রে অন্য কোন অফিসের নিয়োগ বিধি অনুসরণের প্রয়োজন হইলে নিজস্ব নিয়োগ বিধিতে সংশোধনী আনয়নপূর্বক উক্ত নিয়োগ বিধি অনুসরণের বিধান সংযোজন পূর্বক অনুসরণ করা যাবে।১৬ সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বিধিতে আন্তঃ বিভাগ/দপ্তরে বদলির বিধান না থাকলে বদলির মাধ্যমে নিয়োগের কোন সুযোগ নেই।
কোন শূন্য পদে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়োগ বিধি অনুসরণ বাধ্যতামূলক। নিয়োগ বিধিতে নিয়োগ পদ্ধতি, নিয়োগ যোগ্যতা, বয়সসীমা এবং যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা উল্লেখ থাকে এবং এই সকল বিষয় অনুসরণ করিয়া জনবল নিয়োগ করতে হয়।এর কোনরূপ ব্যতয় ঘটলে উক্ত নিয়োগ বিধিসম্মত হবে না। কোন দপ্তরের নিয়োগ বিধি না থাকলে অর্থাৎ নিয়োগের শর্তাবলী উল্লেখ না থাকলে সেইক্ষেত্রে নিয়োগ প্রদান করা কোনভাবেই সম্ভব না। তাছাড়া খসড়া নিয়োগ বিধি চূড়ান্ত নয়। অনুমোদনের বিভিন্ন পর্যায়ে এর বিভিন্ন শর্তাদির যে কোনরূপ পরিবর্তন ঘটতে পারে। যার কারণে খসড়া নিয়োগ বিধি অনুসরণে শূন্য পদ পূরণের বিধিগত সুযোগ নাই।
কোন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিধি ব্যতীত শূন্য পদে নিয়োগ প্রদানের বিধিগত সুযোগ নাই। ইহাছাড়া এক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিধি দ্বারা অন্য প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদে নিয়োগেরও সুযোগ নাই। এক নিয়োগ বিধির বিধান অন্য নিয়োগ বিধির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
নিয়োগ বিধি পরিবর্তন বা সংশোধন
সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত নিয়োগ বিধি রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন বা সংশোধন করিতে পারেন। তবে কর্মরত কোন কর্মচারীর স্বার্থের পরিপন্থিভাবে নিয়োগ বিধিতে কোনরূপ পরিবর্তন করা যাবে না।(Nirmal Chandra Bhattacharjee v. Union of India, 1991. Supp (2) SCC 363) এছাড়া আইনের অধীনে প্রণীত নিয়োগ বিধি যে কর্তৃপক্ষ প্রণয়ন করেছেন, উক্ত কর্তৃপক্ষই কেবল তা পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারেন।
কোন অফিস আদেশ বা স্মারকমূলে নিয়োগ বিধির বিধান পরিবর্তন বা সংশোধন করা যায় না। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত বিধি সংবিধানের এবং সংসদ কর্তৃক প্রণীত কোন আইনের পরিপন্থি হতে পারবে না।(Gurdial Sing v. State of Punjab, 1976 (1) SLR 78)
নিয়োগ বিধি প্রণয়ন ও সংশোধনের পদ্ধতি
সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের অধীনে নিয়োগ বিধি প্রণয়ন বা সংশোধনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের। নতুন কোন অফিস স্থাপিত হওয়ার ক্ষেত্রে বা ইতোপূর্বে সৃষ্ট কোন অফিসের নিয়োগ বিধি না থাকার ক্ষেত্রে নতুন নিয়োগ বিধি প্রণয়নের প্রয়োজন হয়। অপরদিকে বিদ্যমান নিয়োগ বিধিতে অন্তর্ভুক্ত নাই, এমন কোন নতুন পদ সৃষ্ট হওয়ার প্রেক্ষিতে অথবা প্রকল্পের কোন নতুন পদ রাজস্বখাতে স্থানান্তর হওয়ার কারণে অথবা বিদ্যমান নিয়োগ বিধির কোন বিধানের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিধি সংশোধনের প্রয়োজন হয়।
নিয়োগ বিধি প্রণয়ন বা সংশোধনের জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিধি পরীক্ষণ সংক্রান্ত উপ-কমিটির নিকট নির্ধারিত ফরমেট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নিয়োগ বিধি প্রণয়ন/সংশোধনের প্রস্তাব প্রেরণ করতে হয়। উপ-কমিটির সুপারিশের পর উপকমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী উপকমিটির মাধ্যমে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বিবেচনার জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করতে হয়। প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশের পর উক্ত সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনে খসড়া সংশোধন পূর্বক কর্ম কমিশনের পরামর্শের জন্য প্রেরণ করতে হয়। কর্ম কমিশনের পরামর্শ পাওয়ার পর প্রস্তাবিত খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে ভেটিং এর জন্য প্রেরণ করতে হয়। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের পরীক্ষণের অর্থাৎ ভেটিংয়ের পর প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করতে হয়। বাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর অনুমোদিত নিয়োগ বিধিটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের যথাযথ কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরের পর এস আর ও নম্বর প্রদান ও গেজেটে প্রকাশের জন্য লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে প্রেরণ করতে হয়।
নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ (Appointing Authority)
সাধারণভাবে নিয়োগকর্তাই নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। আইন বা বিধি বা প্রবিধান দ্বারা কর্তৃত্বপ্রাপ্ত যে কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রদান করেন উক্ত কর্তৃপক্ষই নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রদান করিলে উক্ত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে গণ্য। ইহাছাড়া অর্পিত ক্ষমতাবলে নিয়োগ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে গণ্য। উল্লেখ্য নিয়োগের ক্ষমতা নিয়োগকারী অধস্তন কর্তৃপক্ষের নিকট অর্পণ করিতে পারিলেও চাকরি হইতে বরখাস্তের ক্ষমতা অর্পণ করিতে পারেন না।(Government Servants Appointment, Promotion and Disciplinary Actions, G.C Mathur. First Edition, Eastern Book Company)
সরকারী কর্মচারীদের ক্ষেত্রে নিয়োগ সংক্রান্ত আইন বা নিয়োগ বিধিতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নাম উল্লেখ থাকে। তবে। ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪’ তে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কে সংজ্ঞা দেওয়া হয় নেই। ফলে ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ক্যাডার নিয়োগবিধি দ্বারা নির্ধারণ করা হয়নি। Rules of L'usiness এর বিধান দ্বারা ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত হয়ে থাকে।
Rules of Business, 1996 এর SCHEDULE-IV (List of cases to e submitted to the Prime Minister and The President) তে এই সংক্রান্তে নিয়া প বিধান সন্নিবেশিত আছে-
"15. First appointment to any post belonging to any regularly constituted cadre service."
Rules of Business, 1996 এর উপরোক্ত বিধানের কারণে যে কোন ক্যাডারের যে কোন পদের প্রারম্ভিক নিয়োগ প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়ার কারণে ক্যাডার পদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ মহানান্য রাষ্ট্রপতি।
নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধি সাধারণতঃ মডেল নিয়োগ বিধি অনুসরণে প্রণয়ন করা হয়। মডেল নিয়োগ বিধিতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সংজ্ঞা নিম্নরূপ- "নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অর্থ সরকার বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতা প্রদত্ত যে কোন কর্মকর্তা[এস্টাব্লিশমেন্ট ম্যানুয়েল, ২০০৯, (ভলিউম-১), পৃ-৩৫৭]
সুতরাং বলা যায় সুনির্দিষ্টভাবে কোন নিয়োগ বিধিতে অন্যরূপ কোন কর্তৃপক্ষের উল্লেখ না করিয়া উপরোক্ত মডেল অনুসরণে নিয়োগ বিধি প্রণীত হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সরকার। অবশ্য সরকার উক্ত ক্ষমতা যে কোন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে অর্পন করিতে পারেন। উল্লেখ্য এইখানে সরকার বলিতে সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝাইবে।
Rules of Business, 1996 এর SCHEDULE-V (List of cases to be submitted to the Prime Minister) এর ক্রমিক নং ১৭ এর বিধান অনুযায়ী সংযুক্ত অধিদপ্তর ও অধঃস্তন অফিসের বেতন গ্রেড-৩ ও তদুর্ধ্ব কর্মকর্তা পদে নিয়োগের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের প্রয়োজন বিধায় উক্ত পদসমূহের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রী। অপরদিকে মন্ত্রণালয়ের/বিভাগের কার্য বন্টন তালিকা অনুযায়ী গ্রেড-৩ এর নিম্নে কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা বিভিন্ন পর্যায়ে অর্পণ করা হয়। কোন ক্ষেত্রে কার্য বন্টন তালিকা না থাকার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে সচিব নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে গণ্য। অবশ্য সচিব প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা এই ক্ষমতা অধঃস্তন কর্তৃপক্ষের নিকট অর্পন করতে পারেন।
নিয়োগের ক্ষমতা কেবল নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষেরই। নিয়োগের ক্ষমতা নাই এমন কোন ব্যক্তি নিয়োগ প্রদান করিলে উক্ত ব্যক্তি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে গণ্য হইবে না।[State of Assam v. Kripanath Sarma, AIR 1967 SC 459.]
নিয়োগ বিধি অনুসারে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সরকার হইলে এবং উক্ত ক্ষমতা কোন আদেশবলে মহা-পরিচালকের উপর অর্পন না করা থাকিলে মহা-পরিচালক নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারেন না।'"
নিয়োগ প্রক্রিয়া (Recruitment)
নিয়োগ প্রক্রিয়া (Recruitment) ও নিয়োগ (Appointment) এর পার্থক্য
Recruitment Appointment শব্দ দুইটির অর্থ সম্পূর্ণ পৃথক। Recruitment দ্বারা বুঝায় তালিকাভুক্তিকরণ, দরখাস্ত গ্রহণ, বাছাই ও নিয়োগের অনুমোদন এবং এই সকলই হইতেছে Appointment এর প্রক্রিয়াগত ধাপ। অপরদিকে Appointment দ্বারা কোন ব্যক্তির কোন নির্দিষ্ট পদে পদায়ন বুঝায়।
সুতরাং দেখা যায় Recruitment হইতেছে Appointment এর প্রাথমিক স্তর বা প্রক্রিয়া। Recruitment দ্বারা প্রার্থী বাছাই, নির্বাচন, মনোনয়ন ও নিয়োগের জন্য অনুমোদন বুঝায়, প্রকৃত নিয়োগ বা পদায়ন বুঝায় না। Recruitment এর পরবর্তী ধাপ হইতেছে Appointment। Appointment দ্বারা কোন ব্যক্তিকে কোন নির্দিষ্ট পদে বা চাকরিতে পদায়ন বুঝায়। অর্থাৎ নিয়োগ বলতে নিয়োগের জন্য অনুমোদনকৃত ব্যক্তিকে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাঁর যোগদানপত্র গ্রহণপূর্বক সংশ্লিষ্ট পদে পদায়ন বুঝায়। নিয়োগের জন্য মনোনীত ব্যক্তির পদায়নের দ্বারা নিয়োগকার্য সম্পন্ন হয়।
নিয়োগ প্রক্রিয়া (Recruitment) বন্ধ করণ বা স্থগিতকরণ
Appointment তথা নিয়োগের পূর্বে যে কোন সময় সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়া (Recruitment) বন্ধ করতে পারেন। কোন নিয়োগপ্রার্থী সরকারকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বাধ্য করতে পারে না। এমনকি নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাই করার পরও উক্ত বাছাইকৃত প্রার্থীর নিয়োগের অধিকার জন্মায় না। সরকারের পরবর্তী কোন তারিখে সংশোধিত যোগ্যতা বা শর্ত আরোপ পূর্বক নতুনভাবে প্রার্থী বাছায়ের ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ নিয়োগপত্র জারির পূর্বে যে কোন সময় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের কিংবা নতুনভাবে পুনঃনিয়োগ প্রক্রিয়া আরম্ভের ক্ষমতা রয়েছে।
জারিকৃত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার পূর্বক সংশোধিত নিয়োগ বিধি অনুযায়ী নতুনভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করার অধিকার সরকারের রয়েছে।
পূর্ব প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে প্রাপ্ত সকল বৈধ আবেদনকারীদের আবেদন বহাল রেখে উক্ত আবেদনকারীদের পুনরায় আবেদন করার প্রয়োজন নেই– মর্মে উল্লেখ করে নতুনভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা যায়।
সমমানের ডিগ্রি
কোন নিয়োগ বিধিতে বা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সমমানের ডিগ্রির উল্লেখ না থাকলেও সরকার ঘোষিত সমমানের ডিগ্রিগুলি সমমানের ডিগ্রি হিসাবে গণ্য হবে।
সরকারী চাকুরীতে নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ (বিশেষ বিধান) বিধিমালা, ২০০৩, ধারা-৪ এ বলা আছে, যে সকল প্রথম শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অনার্সসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নির্ধারিত আছে, ঐ সকল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে চার বৎসর মেয়াদী ডিগ্রি অনার্সসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমতুল্য হিসাবে গণ্য হবে।
সাধারণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট/ডিগ্রীর ন্যায় অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট/ডিগ্রী যাহা মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতক (সম্মান) ইত্যাদির সমমানের বলে সরকার কর্তৃক স্বীকৃত, তা নিয়োগ বিধিতে উল্লেখ না থাকলেও আপনা-আপনি প্রযোজ্য হবে।
নিয়োগ যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা
প্রতিটি পদে সরাসরি নিয়োগের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত বিধান সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বিধিতে বা প্রবিধানে সন্নিবেশিত থাকে। নিয়োগ বিধিতে বা প্রবিধানে সন্নিবেশিত উক্ত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা পদের শ্রেণী, পদের প্রকৃতি, পদের কার্যাবলী ইত্যাদির ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিম্নরূপ হতে পারে—
(ক) সাধারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা;
(খ) কারিগরি শিক্ষাগত যোগ্যতা;
(গ) পেশাগত অভিজ্ঞতা;
(ঘ) পূর্ব অভিজ্ঞতা;
(ঙ) বিশেষ যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা;
(চ) বিশেষ প্রকৃতির কতিপয় পদের ক্ষেত্রে শারীরিক যোগ্যতা;
(ছ) বিশেষ ধরনের দক্ষতা;
(জ) প্রশিক্ষণ;
(ঝ) সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বয়সসীমা;
(ঞ) নির্দিষ্ট এলাকা ভিত্তিক আবেদনের যোগ্যতা, ইত্যাদি।
উপরোক্ত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মধ্যে কতিপয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক এবং কতিপয় নির্দেশনামূলক তথা অগ্রাধিকারমূলক হতে পারে। বাধ্যতামূলক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকলে কোন ব্যক্তির আবেদনের অধিকার সৃষ্টি হবে না এবং নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও বাধ্যতামূলক যোগ্যতাবিহীন কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে এমনকি বাছাই পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দিতে পারবেন না। বাধ্যতামূলক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা শিথিলযোগ্য নয়, কিন্তু নির্দেশনামূলক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা শিথিল করা যায়।
যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা শিথিলকরণ
যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা শিথিলকরণ নির্ভর করে বিধি ও প্রবিধানের এই সংক্রান্ত বিধানের উপর। অর্থাৎ বিধি বা প্রবিধানে, এর উপর শিথিলকরণের বিধান সন্নিবেশিত আছে কি না। বিধি বা প্রবিধানে শিথিলকরণের কোন বিধান সন্নিবেশিত না থাকার ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা শিথিল করা যায় না। তাছাড়া বিধি বা প্রবিধানে শিথিলকরণের বিধান থাকলে তা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করতে হবে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত যোগ্যতা অনুসরণ বাধ্যতামূলক। আবশ্যিক যোগ্যতা বা অভিজ্ঞাতা শিথিলের বিধান না থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা নাই এমন প্রার্থী নির্বাচন অকার্যকর।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
প্রতিটি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়োগ বিধিতে বর্ণিত থাকে। কোন ক্ষেত্রে নিয়োগ বিধি প্রণীত না হওয়ার ক্ষেত্রে (যেমন প্রকল্পে নিয়োগের ক্ষেত্রে) প্রশাসনিক নির্দেশনার দ্বারা শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা যায়।
নূন্যতম অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ নয়, এমন কোন ব্যক্তিকে সরকারী চাকরিতে নিয়োগের সুযোগ নাই। কোন পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কি হবে, তা সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বিধিতে অন্তর্ভুক্ত থাকে। নিয়োগ বিধিতে সন্নিবেশিত যোগ্যতার কম যোগ্যতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তিকে নিয়োগের কোন সুযোগ নেই।
চাকরির আবেদনের সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল বিষয় উল্লেখ করতে হয়। এইক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন তথ্য গোপন করে চাকরির আবেদন করলে পরবর্তী পর্যায়ে উক্ত তথ্য সার্ভিস রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসরণ বাধ্যতামূলক। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত যোগ্যতা অপেক্ষা কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান জালিয়াতির আওতাভুক্ত। এইক্ষেত্রে বিষয়টি শুধু নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ও নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত যোগ্যতাসম্পন্ন অন্য প্রার্থীগণও এর দ্বারা বিক্ষুব্দ।[District Collector & Chairman v. M. Tripura Sundari Devi, (1990) 3 SCC 655:1990 SCC (L&S) 520]
আবেদন দাখিলের তারিখে প্রার্থী প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন না করে থাকলে বাছাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, যদিও বাছাই পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। কারণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়। কিন্তু যিনি আবেদন দাখিলের তারিখে উক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেন নাই, তার পক্ষে উক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত কপি দাখিল করা সম্ভব নয় বিধায় আবেদনটি বাছাইয়ের সময় বাতিলযোগ্য। আবেদনপত্র দাখিলের পরবর্তী পর্যায়ে উক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করলেও উহা দ্বারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ হয় না। ফলে উক্তরূপ আবেদনপত্র বাতিলযোগ্য। সুতরাং দেখা যায় নিয়োগের যে যোগ্যতা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, উক্ত যোগ্যতা আবেদনপত্র দাখিলের শেষ তারিখের মধ্যে অর্জিত হতে হবে। অর্থাৎ উক্ত তারিখের মধ্যে অর্জিত ডিগ্রির ফলাফল প্রকাশিত হতে হবে। উক্ত তারিখের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত না হলে আবেদন পত্র বাতিলযোগ্য হবে।[U.P. Public Service Commission v. Alpana, (1994) 2 SCC 723]
আবেদনের পরে এবং চাকরিতে যোগদানের পূর্বে উচচতর ডিগ্রী (শিক্ষাগত যোগ্যতা) অর্জন করলে তা চাকরি সংক্রান্ত সার্ভিস বতে লিপিবদ্ধ করতে এবং পরবর্তী পর্যায়ে বর্তমান চাকরির কোন সুবিধা প্রাপ্তিতে বাঁধা নেই। চাকরিতে যোগদানের পর যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করিলে উহা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীর চাকরি সংক্রান্ত বিবরণীতে অন্তর্ভুক্তকরণে বাঁধা নাই।
পাবর্ত চট্টগাম অঞ্চলের চাকরিতে নিয়োগের অভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা
কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধীন চাকরিতে (শিক্ষকতা, কারিগরী ও ক্যাডার পদ ব্যতীত অন্যান্য পদে) নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা একধাপ শিথিলকরণের সুবিধা উপজাতীয় এবং অউপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দাগণ প্রাপ্য। উক্ত অঞ্চলের বাহিরে বদলীযোগ্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই শিথিলকরণ প্রযোজ্য নয়।
প্রার্থী বাছাই
প্রার্থী বাছাই (selection) দ্বারা শুধু নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন বুঝায় না। বাছাই প্রক্রিয়া আরম্ভ হয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে এবং শেষ হয় নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রণয়নের দ্বারা। বাছাই প্রক্রিয়াগুলি হলো- নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি, আবেদন বাছাই, ত্রুটিপূর্ণ আবেদন পত্র বা অযোগ্য আবেদন পত্রসমূহ বাতিলকরণ, নিয়োগ সংক্রান্ত লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ, মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ এবং কৃতকার্য প্রার্থীদের তালিকা প্রণয়ন।
প্রার্থী বাছাইয়ের এই দায়িত্ব কর্ম কমিশনের আওতাভুক্ত পদে কর্ম কমিশনের এবং কর্ম কমিশনের আওতা বহির্ভূত পদে এই উদ্দেশ্যে গঠিত নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির।
নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাই পদ্ধতি
নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। সাধারণতঃ প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদ্ধতিসমূহ অনুসরণ করা হয়—
১। শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই
যে সকল ক্ষেত্রে বিশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগের বিধান থাকে উক্তরূপ ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। সাধারণতঃ গবেষণাধর্মী উচ্চতর পদসমূহে নিয়োগের ক্ষেত্রে এবং যে সকল ক্ষেত্রে বিশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীর সংখ্যা নিতান্তই কম, ঐ সকল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তবে বিশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী একাধিক হওয়ার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির পরিবর্তে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মৌখিক পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
২। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মৌখিক পরীক্ষা: একইরূপ শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী
একাধিক হলেও প্রার্থীর সংখ্যা অত্যধিক না হওয়ার ক্ষেত্রে এবং পদটির প্রকৃতির কারণে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ব্যতীত পদটির জন্য প্রার্থীর বুদ্ধিমত্তা, শারীরিক গঠন, বাচন ভঙ্গী বা পদটির দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষ কোন মানসিক বা শারীরিক যোগ্যতার প্রয়োজন হলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
৩। প্রতিযোগিতামূলক লিখিত পরীক্ষা
প্রার্থীর সংখ্যা অত্যধিক হওয়ার এবং পদটি কারণিক প্রকৃতির হওয়ার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
৪। মৌখিক পরীক্ষা
নিম্ন শ্রেণীর পদসমূহে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেখানে পদের কাজটি সাধারণ প্রকৃতির এবং বিশেষ কোন দক্ষতার প্রয়োজন হয় না, উক্তরূপ ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তবে প্রার্থীর সংখ্যা মৌখিক পরীক্ষার জন্য অস্বাভাবিক বেশী হলে সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার মান যাচাইপূর্বক মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচনের জন্য লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।
৫। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা
এই পদ্ধতি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ের সর্বজনীন স্বীকৃত পদ্ধতি। সাধারণতঃ তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণীর প্রারম্ভিক পদসমূহে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীর জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা যাচাই করা যায়। কিন্তু কতিপয় বিষয় যেমন প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি ঝোক, তীক্ষ্ণধীসম্পন্নতা (smartness), নেতৃত্ব দানের সক্ষমতা, মানসিক তৎপরতা, জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা, বাচনিক ক্ষমতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক মূল্যবোধ, বিচার ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তার গভীরতা, সংশ্লিষ্ট পদের জন্য সার্বিক উপযুক্ততা, ইত্যাদি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা সম্ভব হয় না। ফলে ক্যাডার সার্ভিসসহ প্রশাসনিক ও নীতি নির্ধারণী পদসমূহে নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার অতিরিক্ত হিসাবে উল্লেখিত বিষয়সমূহ বিবেচনা পূর্বক সর্বাধিক যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের লক্ষ্যে মৌখিক পরীক্ষার বিধান রাখা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়োগ বা বাছাই কমিটি এবং এর দায়িত্ব
সাধারণতঃ কোন পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির দ্বারা আবেদন চাওয়া হয়। উক্ত আবেদন পাওয়ার পর যোগ্য আবেদনকারী বাছাই এবং যোগ্য আবেদনকারীদের মধ্য হতে নিয়োগের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম গ্রহণ করতে হয়। নিয়োগের এই সকল প্রক্রিয়া কর্ম কমিশনের আওতাভুক্ত পদে কর্ম কমিশন এবং কর্ম কমিশনের আওতা বহির্ভূত পদে বাছাই কমিটি সম্পন্ন করে। কর্ম কমিশনের আওতা বহির্ভূত পদে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য নিয়োগ বিধিতে কোন কমিটি নির্ধারিত থাকলে উক্ত কমিটি এবং উক্তরূপ কমিটি না থাকার ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত কমিটি উক্ত বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।
নিয়োগ বা বাছাই কমিটির কার্য বলী বিচারিক কার্য নয়। ইহা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক কার্য। বিধিবদ্ধ নির্দেশনা না থাকার ক্ষেত্রে কোন প্রার্থীকে নির্বাচন করার বা না করার কারণ প্রদর্শনের প্রয়োজন হয় না।
সরাসরি নিয়োগের জন্য গঠিত নিয়োগ বা বাছাই কমিটির দায়িত্ব হলো নিয়োগের জন্য বাছাই পদ্ধতি নিরূপন, প্রাপ্ত আবেদন পত্র যাচাই বাছাইপূর্বক যোগ্য আবেদনকারীদের নিকট ইন্টারভিউ কার্ড প্রেরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, লিখিত এবং/অথবা মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাদি, সরকারের কোটানীতি ও প্রচলিত অন্যান্য বিধিবিধান অনুসরণ পূর্বক নিয়োগের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রণয়ন পূর্বক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা।
বাছাই কমিটির সকল সদস্যকে সম্পৃক্ত রেখে উপরোক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। শুধু মৌখিক পরীক্ষার সময় কমিটির সদস্যদেরকে সম্পৃক্ত করা যথাযথ নয়। নিয়োগের ব্যাপারে বাছাই পদ্ধতি নিরূপন, জেলা কোটা অনুসরণ প্রভৃতি দায়িত্ব কমিটির উপর বর্তায়। ফলে কমিটির কার্যক্রমের সকল পর্যায়ে কমিটির সকল সদস্যকে অবহিত রেখে কার্যক্রম গ্রহণ করা বাঞ্চনীয়।
কোন প্রার্থী নিজে বাছাই কমিটির সদস্য হতে পারে না। বাছাই কমিটির কোন সদস্যের কোন নিকটাত্মীয় প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে উক্ত সদস্য উক্ত বাছাই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারবেন না। কর্ম কমিশনের কোন সদস্যের কোন নিকটাত্মীয় প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে উক্ত প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষায় উক্ত সদস্য উপস্থিত থাকতে পারবেন না এবং উক্ত প্রার্থীকে কত নম্বর দেওয়া হয়েছে, তাও কমিটির অন্য সদস্যরা সংশ্লিষ্ট সদস্যকে অবহিত করতে পারবেন না। সর্বজনীন ন্যায় বিচারের নীতি অনুযায়ী নিজের বিষয়ে নিজে বিচারক হওয়া যায় না এবং পক্ষপাতহীনভাবে সরল বিশ্বাসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। সর্বজনীন ন্যায় বিচারের এই নীতি বাছাই কমিটির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
নিয়োগ বিধিতে বর্ণিত সরাসরি নিয়োগের শর্তাদি
নিয়োগ বিধির বিধান অনুসরণপূর্বক সরাসরি নিয়োগ করতে হয়। নিয়োগ বিধিতে নিয়োগের কতিপয় পূর্ব শর্ত বর্ণিত থাকে। উক্ত শর্তসমূহ পূরণ না করা পর্যন্ত কোন ব্যক্তিকে সরকারী চাকরিতে নিয়োগ করা যায় না। সাধারণতঃ প্রতিটি নিয়োগ বিধিতে নিম্নরূপ শর্তাদি সন্নিবেশিত থাকে–
(১) কমিশনের সুপারিশ ব্যতিরেকে কমিশনের আওতাভুক্ত কোন পদে কোন ব্যক্তিকে সরাসরি নিয়োগ করা যাবে না।
(২) নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত বাছাই কমিটির সুপারিশ ব্যতিরেকে কমিশনের আওতা বহির্ভূত কোন পদে সরাসরি নিয়োগ করা যাবে না।
(৩) কোন পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য কোন ব্যক্তি যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হবেন না, যদি তিনি—
(ক) বাংলাদেশের নাগরিক না হন, অথবা বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা না হন, অথবা বাংলাদেশের ডমিসাইল না হন;
(খ) এমন কোন ব্যক্তিকে বিবাহ করেন অথবা বিবাহ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন যিনি বাংলাদেশের নাগরিক নহেন।
(৪) কোন পদে সরাসরি নিয়োগ করা হবে না, যদি
(ক) নিয়োগের জন্য বাছাইকৃত ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড অথবা, ক্ষেত্রবিশেষে, তৎকর্তৃক মনোনীত কোন মেডিকেল অফিসার এই মর্মে প্রত্যয়ন না করেন যে, উক্ত ব্যক্তি স্বাস্থ্যগতভাবে অনুরূপ পদে নিয়োগযোগ্য এবং তিনি এইরূপ কোন দৈহিক বৈকল্যে ভুগতেছেন না, যা সংশ্লিষ্ট পদের দায়িত্ব পালনে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে; এবং
(খ) এইরূপে বাছাইকৃত ব্যক্তির পূর্ব কার্যকলাপ যথাযোগ্য এজেন্সীর মাধ্যমে তদন্ত না হয়ে থাকে ও তদন্তের ফলে দেখা না যায় যে, প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিযুক্তির জন্য তিনি অনুপযুক্ত নয়।
(৫) কোন ব্যক্তিকে কোন পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে না, যদি তিনি-
(ক) উক্ত পদের জন্য কমিশন কর্তৃক বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দরখাস্ত আহ্বানের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ফিসহ যথাযথ ফরম ও নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে দরখাস্ত দাখিল না করেন;
(খ) সরকারী চাকরি কিংবা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চাকরিতে নিয়োজিত থাকাকালে স্বীয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে দরখাস্ত দাখিল না করেন।
The Bangladesh Civil Service Recruitment Rules, 1981 তে নিম্নরূপ শর্তাদি সন্নিবেশিত আছে-
"4. Appointment by direct recruitment:-(1) No appointment to a Service by direct recruitment shall be made except upon the recommendation of the Commission. (2) No person shall be eligible for appointment to a Service by direct recruitment, if he-
(a) is not a citizen of Bangladesh, or a permanent resident of, or domiciled in, Bangladesh; or
(b) is married to, or has entered into a promise of marriage with, a person who is not a citizen of Bangladesh. (3) No appointment to a Service by direct recruitment shall be made
until-
(a) the person selected for appointment is certified by a Medical Board set up for the purpose by the Director General of Health Services to be medically fit for such appointment and that he does not suffer from any such organic defect as is likely to interfere with the discharge of the duties of a Service; and
(b) the antecedents of the person so selected have been verified through appropriate agencies and found to he such as do not render him unfit for appointment in the service of the Republic.
(4) No person shall be recommended for appointment to a Service unless-
(a) he applied in such form, accompanied by such fee and before such date, as was notified by the Commission while inviting applications for a Service; and
(b) in the case of a person already in Government service or in the service of a local authority, he applied through his official superior."
উপরোক্ত বিধান পর্যালোচনায় দেখা যায় সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্তাদি অবশ্যই অনুসরণীয়-
(ক) কর্ম কমিশনের আওতাভুক্ত পদে কর্ম কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ করতে হবে।
(খ) কর্ম কমিশনের আওতা বহির্ভূত পদে সংশ্লিষ্ট বাছাই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ করতে হবে।
(গ) বাংলাদেশের নাগরিক নন বা বাংলাদেশে ডমিসাইল নয় এমন কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ করা যাবে না।
(ঘ) বাংলাদেশের নাগরিক নন এমন কোন ব্যক্তিকে বিবাহ করিয়া থাকলে বা বিবাহ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে থাকলে উক্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ করা যাবে না।
(ঙ) স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যোগ্য বিবেচিত হতে হবে।
(চ) পুলিশ ভেরিফিকেশন সন্তোষজনক হতে হবে।
(ছ) বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ফিসহ যথাযথ ফরমে এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
(জ) যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে আবেদন করে কোনো ব্যক্তি নিয়োগপ্রাপ্ত হলে উক্ত নিয়োগ নব নিয়োগ হিসাবে গণ্য হবে এবং তাহার পূর্ব চাকরিকাল শুধু পেনশন ও বেতন সংরক্ষণের জন্য গণনাযোগ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, জ্যেষ্ঠতা বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধাদির জন্য উক্ত কর্মকাল গণনাযোগ্য হবে না।
তাছাড়া, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর চতুর্থ অধ্যায়ে ‘নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন, ইত্যাদি’ শিরোনামে ধারা-৭ এ বলা হয়েছে যে—
‘(১) এই আইনের আওতাভুক্ত কোনো কর্ম বা কর্মবিভাগে সরাসরি জনবল নিয়োগের ভিত্তি হইবে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা।
(২) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯(৩) এর উদ্দেশ্যে পূরণকল্পে, পদ সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
(৩) বাংলাদেশের নাগরিক নহেন এমন কোনো ব্যক্তিকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ করা যাইবে না।
(৪) যে সকল পদের ক্ষেত্রে কমিশনের পরামর্শ গ্রহণ বা সুপারিশের আবশ্যকতা রহিয়াছে, সেই সকল পদে কমিশনের এবং অবশিষ্ট পদে সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে গঠিত কমিটি বা কর্তৃপক্ষের সুপারিশ ব্যতিরেকে, কোনো ব্যক্তিকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে সরাসরি নিয়োগ করা যাইবে না।
(৫) প্রজাতন্ত্রের কর্মে সরাসরি নিয়োগের অন্যান্য বিষয় ও শর্তাদি সরকার কর্তৃক, এই আইন ও আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে, নির্ধারিত হইবে।’
উৎস
১.গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
২.বাংলাদেশের চাকুরী আইন:মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া
৩.সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮
0 Comments