সাময়িক বরখাস্ত(Suspension)
সাময়িক বরখাস্ত
Suspension এর আভিধানিক অর্থ সাময়িকভাবে বরখাস্তকরণ বা নিষ্ক্রিয়করণ। অপরদিকে suspend এর আভিধানিক অর্থ সাময়িকভাবে বরখাস্ত বা নিষ্ক্রিয়। আইনগতভাবে সাময়িকভাবে বরখাস্ত বলতে সাধারণত আইনের সাহায্যে একটি সময়ের জন্য কোন কর্মচারীকে দায়িত্ব পালন হইতে বা কোন কিছু করা হইতে বিরত রাখা বা কোন অধিকার হইতে বঞ্চিত করা। সাময়িক বরখাস্তের ফলে কর্মচারী চাকরি হারায় না এবং পদমর্যাদারও অবনতি ঘটে না, কেবল সাময়িকভাবে পদের ক্ষমতার ও দায়িত্বের অবসান ঘটে। কর্মচারীর পদমর্যাদা একই থাকলেও বেতন প্রাপ্য নয়, কিন্তু খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য। কর্মচারীর ক্ষমতা, দায়িত্ব এবং প্রাধিকার সাময়িকভাবে স্থগিত থাকলেও উক্ত কর্মচারী একই কর্তৃপক্ষের শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থাদির অধীন থাকেন।(AIR 1949 Nag 118, AIR 1953 Cal 45)
এছাড়া প্রশাসনিক পরিভাষা অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত(Suspension) দ্বারা সাময়িক বরখাস্তকরণ বা স্থগিতকরণ বুঝায় এবং শব্দ দ্বারা সাময়িক বরখাস্ত করা বা স্থগিত করা/রাখা বুঝায়।
সাময়িক বরখাস্ত দ্বারা বঞ্চিত অবস্থা অর্থাৎ সাময়িক বঞ্চনা বুঝায় [(1986) 1 ATC 537 (CAT)]। সাময়িক বরখাস্ত অর্থ চাকরি বহাল থাকা অবস্থায় ও চাকরি হইতে বরখাস্ত না করা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মচারী দায়িত্ব পালন হইতে বিরত থাকা সংক্রান্ত আদেশ জারি(AIR 1955 Pat 131 at p. 134(DB)। কোন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত না করিয়া দায়িত্ব পালন হইতে বিরত রাখার আদেশ অবৈধ [Ganesh Singh v. CDA, 1987 (2) SLJ 246 (CAT)]।
সুতরাং দেখা যায় সাময়িক বরখাস্তের অর্থ হচ্ছে, কোন কর্মচারীকে সাময়িকভাবে কিছু দিনের জন্য সরকারী কার্য সম্পাদনে, দায়িত্ব পালনে, সরকারী ক্ষমতা প্রয়োগে বিরত রাখা এবং কতিপয় সরকারী সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার হতে বঞ্চিত রাখা।
আইন/বিধিমালা অনুযায়ী ‘সাময়িক বরখাস্ত’
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯ নম্বর ধারাতে ‘সাময়িক বরখাস্ত’ শিরোনামে বলা হয়েছে যে,
"(১) কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের প্রস্তাব বা বিভাগীয় কার্যধারা রুজু করা হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অভিযোগের মাত্রা ও প্রকৃতি, অভিযুক্ত কর্মচারীকে তাহার দায়িত্ব হইতে বিরত রাখিবার আবশ্যকতা, তৎকর্তৃক তদন্তকার্যে প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা, ইত্যাদি বিবেচনা করিয়া তাহাকে সাময়িক বরখাস্ত করিতে পারিবে:
তবে শর্ত থাকে যে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অধিকতর সমীচীন মনে করিলে, এইরূপ কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করিবার পরিবর্তে, লিখিত আদেশ দ্বারা, তাহার ছুটির প্রাপ্যতা সাপেক্ষে, উক্ত আদেশে উল্লিখিত তারিখ হইতে ছুটিতে গমনের নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।
(২) কোনো কর্মচারী দেনার দায়ে কারাগারে আটক থাকিলে, অথবা কোনো ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হইলে বা তাহার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গৃহীত হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ উক্তরূপ আটক, গ্রেফতার বা অভিযোগপত্র গ্রহণের দিন হইতে তাহাকে সাময়িক বরখাস্ত করিতে পারিবে।
(৩) কোনো সরকারি কর্মচারী তাহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ হইতে অব্যাহতি বা খালাসপ্রাপ্ত হইলে, তাহার সাময়িক বরখাস্ত আদেশ, যদি থাকে, প্রত্যাহার করিতে হইবে।"
সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ১২তে ‘সাময়িক বরখাস্ত’ শিরোনামে বলা হয়েছে যে,
"(১) কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিধি ৩ এর অনুচ্ছেদ-(খ) বা (গ) বা (ঘ) এর অধীনে কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব করা হইলে কর্তৃপক্ষ সমীচীন মনে করিলে উক্ত কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিতে পারিবে:
তবে শর্ত থাকে যে, কর্তৃপক্ষ অধিকতর সমীচীন মনে করিলে, উক্ত সরকারি কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিবার পরিবর্তে লিখিত আদেশ দ্বারা আদেশে উল্লিখিত তারিখ হইতে, তাহার ছুটির প্রাপ্যতা সাপেক্ষে তাহােেক ছুটিতে যাইবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।
(২) কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে চাকুরী হইতে বরখাস্ত, অপসারণ বা বাধ্যতামূলক অবসর দণ্ডের আদেশ যদি কোনো আদালত বা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রহিত বা বাতিল বা অকার্যকর ঘোষিত হয় এবং যদি কর্তৃপক্ষ যে অভিযোগের ভিত্তিতে চাকুরী হইতে বরখাস্ত, অপসারণ বা বাধ্যতামূলক অবসরদানের দণ্ড আরোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছিলেন, সেই অভিযোগের উপর সূচিত কার্যধারার প্রেক্ষাপট বিবেচনাপূর্বক পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তাহা হইলে যে তারিখ হইতে প্রথম চাকুরী হইতে বরখাস্ত, অপসারণ বা বাধ্যতামূলক অবসরের দণ্ড আরোপ করা হইয়াছিল, ঐ তারিখ হইতে সরকারি কর্মচারী সাময়িকভাবে বরখাস্ত রহিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সাময়িক বরখাস্ত অব্যাহত থাকিবে।
সাময়িক বরখাস্তের উদ্দেশ্য
বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বা বিভাগীয় মামলা চলমান অবস্থায় কোন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের উদ্দেশ্যসমূহ হচ্ছে—
(ক) মৌখিক সাক্ষ্যকে প্রভান্বিত করিয়া বা দালিলিক সাক্ষ্যকে টেম্পারিং এর দ্বারা তদন্তে হস্তক্ষেপ করা;
(খ) পুনরায় কোন অসদাচরণ করা বা পুনঃ কোন অপরাধ করা হতে বিরত রাখা; এবং
(গ) অধিষ্ঠিত পদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা।
সাময়িক বরখাস্তকারী কর্তৃপক্ষ
নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্তের আদেশদানের জন্য কর্তৃত্ব সম্পন্ন। The General Clauses Act, 1897এর ১৬ ধারায় Power to appoint to include power to suspend or dismiss শিরোনামের বিধান মোতাবেক কোন পদের নিয়োগদানের ক্ষমতা যে কর্তৃপক্ষের রয়েছে একমাত্র সেই কর্তৃপক্ষই কোন সরকারি কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করতে ক্ষমতাবান। এক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা আরম্ভের সিদ্ধান্ত এবং সাময়িক বরখাস্তের আদেশ একই কর্তৃপক্ষ প্রদান করতে পারেন।
নিয়োগদানের ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের নিম্নতম কোন কর্তৃপক্ষের দ্বারা সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলে এইরূপ সাময়িক বরখাস্ত বিধিবহির্ভূত বলে গণ্য হবে। কিন্তু নিয়োগদানের ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের নিম্নতম কোন কর্তৃপক্ষ যথাযথ কর্তৃপক্ষের দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে থাকলে সেইক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্ত বিধিবহির্ভূত বলে বিবেচিত হবে না। তবে, এইরূপ ক্ষেত্রে নিয়োগদানের নিম্নতম কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোন সরকারি কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে, যে অবস্থার প্রেক্ষাপটে উক্ত কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা উল্লেখপূর্বক নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে যথারীতি অবহিত করা সমীচীন।
নিয়োগদানের ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের নিম্নতম কর্তৃপক্ষের দ্বারা সাময়িক বরখাস্ত যেমন অবৈধ তেমনি নিয়োগদানের ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারা সাময়িক বরখাস্তও প্রশ্নাতীত হয় যদি উভয় কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হয়ে থাকেন। Ram Narayan Tiwari v. Joint-General Manager (1985) ISLJ-527] রায়ে বলা হয়েছে যে, নিয়োগদানের ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কোন কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন না হয়ে কোন সরকারি কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ প্রদান করলে এইরূপ বরখাস্তের আদেশ বেআইনী (illegal) হবে।
সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়সমূহ
সাময়িকভাবে বরখাস্তের অর্থ হলো সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কিছুদিনের জন্য সরকারী কার্য সম্পাদনে বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার হতে বিরত রাখা। সাধারণতঃ গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেলে এবং উক্ত অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেলেই সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া উচিত। ছোটখাট অভিযোগের ক্ষেত্রে এই প্রকার আদেশ দেওয়া যায় না। যে অভিযোগের ফলশ্রুতিতে চাকরি হতে বরখাস্ত, চাকরি হতে অপসারণ বা বাধ্যতামূলক অবসর দানের মতো দন্ড আরোপযোগ্য, শুধু ঐ সকল ক্ষেত্রেই সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া অভিযুক্ত কর্তৃক তদন্ত কার্যক্রমে বাঁধা সৃষ্টি না হলে অথবা তাহার উপস্থিতি সুষ্ঠু তদন্তের অন্তরায় না হলে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।
সাময়িক বরখাস্ত দন্ডের পর্যায়ে না পড়লেও এই ক্ষমতা হালকাভাবে প্রয়োগ করা ঠিক নয়। কেবল সাময়িক বরখাস্ত অতিশয় অপরিহার্য হলেই এই আদেশ দেওয়া উচিত(31 DLR-22)।
সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দানের পূর্বে অপরাধের ধরন এবং এটা গুরুতর অপরাধ নাকি লঘু অপরাধ এবং সাময়িক বরখাস্ত অপরিহার্য কিনা তা বিবেচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
সাময়িক বরখাস্তের ভিত্তিসমূহ
কোন কোন অপরাধের জন্য একজন কর্মচারী তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা যায় বা সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দানের ভিত্তি কি তা নিচে তুলে ধরা হলো—
(ক) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের বলিষ্ঠ প্রাথমিক তথ্যাদি থাকতে হবে;
(খ) অভিযোগ এরূপ গুরুতর প্রকৃতির যে মামলা চলাকালীন সময়ে তাকে কর্মেরত রাখা যুক্তিযুক্ত হবে না, অথবা উক্ত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য দন্ড হবে চাকরি হতে বরখাস্ত;
(গ) মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কর্ম হতে বিরত রাখার বলিষ্ঠ কারণ বিদ্যমান না থাকলে সর্বশেষ পন্থা হিসাবে সাময়িক বরখাস্তের আশ্রয় নেওয়া যাবে না;
(ঘ) শৃঙ্খলার সামান্য বিচ্যুতি বা ছোটখাট বিভাগীয় অপরাধের ক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্ত করা উচিত নয়;
(ঙ) কোন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা উচিত হবে না, যদি না—
(১) সে ইচ্ছাকৃতভাবে বা এক গুয়েমীভাবে আদেশ পালনে অস্বীকৃতি জানায়;
(২) তদন্তকালে কর্মরত থাকার ক্ষেত্রে তদন্তকাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি বা তদন্তকে ব্যাহত করে;
(৩) কর্মচারী পুলিশ হেফাজতে থাকে; এবং
(৪) এমন প্রকৃতির অপরাধে অভিযুক্ত যা প্রমাণিত হওয়ার ক্ষেত্রে চাকরি হতে বরখাস্ত দন্ড প্রয়োগযোগ্য।[সূত্র: স্মারক নম্বর F.32/48-Ests (SE) তারিখ ২১/০৭/১৯৯৪ খ্রিঃ]
সাময়িক বরখাস্ত যখন যৌক্তিক বা বাধ্যতামূলক
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিস মেমোরেন্ডাম নং ED(Reg. VII)/S- 123/78-115(500), Dated Dacca the 21 November, 1978 স্মারকের নির্দেশনা মোতাবেক কোন কর্মচারী গ্রেফতারের পর বা আত্মসমর্পনের পর জামিনে মুক্তি লাভ করলেও মামলার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায়ই থাকবেন। এইক্ষেত্রে যাতে কোন জটিলতার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য কর্তৃপক্ষের সাময়িক বরখাস্তের ফরমাল আদেশ জারি করতে হবে।
সুতরাং কোন কর্মচারী যেকোন ধরনের ফৌজদারী মামলায় অথবা সরকারী পাওনা আদায় আইন বা অর্থ ঋণ আইনের আওতায় নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে গ্রেফতারের বা আত্মসমর্পনের দিন হতে সাময়িক বরখাস্ত হিসাবে গণ্য হবেন—
(১) জেলে আটক থাকলে; বা
(২) পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হলে; বা
(৩) হাজতে আটক থাকলে; বা
(৪)রাষ্ট্রের নিরাপত্তার পরিপন্থি কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকলে।
(৫)গ্রেফতার বা কোর্টে হাজিরের পর জামিনে মুক্তি লাভ করলে, গ্রেফতার/আত্মসমর্পনের দিন হতে সাময়িক বরখাস্ত হিসাবে গণ্য হবেন।
[সূত্র: Government Servants Appointment, Promotion and Disciplinary Actions, by G.C. Mathur, First Edition, 1990, p-168]
উপরোক্ত ক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি না করলেও উক্ত কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত বলে গণ্য হবেন। তবে জটিলতা এড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে সাময়িক বরখাস্তের ফরমাল আদেশ জারি করতে হবে। উল্লেখ্য, উপরোক্ত ক্ষেত্রে যদি সংশ্লিষ্ট কর্মচারী তথ্য গোপনপূর্বক উক্ত সময়ের জন্য ছুটি অনুমোদন করে নেয় অথবা জামিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিষয়টি গোপন করে সাময়িক বরখাস্তের হাত হতে নিজেকে রক্ষা করে এবং নিয়মিত বেতন ভাতাদি গ্রহণ করে, তবে এক্ষেত্রে অসদাচরণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ED(Reg.-VI)S-123/78/115(500), তারিখ ২১ নভেম্বর, ১৯৭৮ অনুসারে জামিন লাভের ক্ষেত্রেও সাময়িক বরখাস্ত করা উচিত। তবে মামলার প্রেক্ষাপট এবং মামলা চলমান থাকা অবস্থায় আদালতে হাজিরার জন্য ছুটি প্রদান বা কোন কারণে জামিন বাতিলের ক্ষেত্রে সরকারী কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে কিনা এসব বিবেচনাপূর্বক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। [সূত্র: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর-০৫.১৭৩,০০৮. ০৯.০০.০০২.২০১০- ১১৯, তারিখঃ ৩০ মার্চ, ২০১০]
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন বিভাগের ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯ তারিখের সার্কুলার নম্বর- রাস/জানি (দুদ) ঢা-১ (৩১)/ঢাকা/৮৮-১৪৩ (৪৫) মোতাবেক দুর্নীতিমূলক অপরাধের জন্য অভিযোগ করার জন্য মামলার মঞ্জুরী প্রদান করলে সাময়িক বরখাস্ত করা বাধ্যতামূলক।
কখন থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ কার্যকর হয়
Umashankar Chatterjee v. Union of India, 1982 Lab IC 1361 মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সাময়িক বরখাস্তের আদেশ ডাকে বা বাহকের মাধ্যমে প্রেরণের সংগে সংগে তা কার্যকর হয়ে যায়, কারণ ডাকে বা বাহকের মাধ্যমে প্রেরণের সংগে সংগে উক্ত আদেশটি সংশোধনের বা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে তা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত হয়।
সাময়িক বরখাস্তের মেয়াদকাল
বিভাগীয় মামলা অনিষ্পন্ন থাকাকালীন সময়ে অথবা গুরুতর অভিযোগের কারণে বিভাগীয় মামলা রুজু করার পূর্বে কোন সরকারি কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পর বিভাগীয় মামলার ফলশ্রুতিতে উক্ত সরকারি কর্মচারী শাস্তি হিসাবে চাকুরীচ্যুতি বা চাকুরী হইতে অপসারিত হইলে উক্ত চাকুরীচ্যুত বা চাকুরী হইতে অপসারণের আদেশ জারি হওয়ার সাথে সাথে সাময়িক বরখাস্তের আদেশটি উক্ত চাকুরীচ্যুতি বা অপসারণের আদেশের মধ্যে বিলীন হইয়া যাইবে। পরবর্তীতে কোন আদালত কর্তৃক উক্ত চাকুরীচ্যুতি বা চাকুরী হতে অপসারণের আদেশটি অবৈধ বলে ঘোষিত হলে যে অভিযোগের ভিত্তিতে চাকুরীচ্যুতির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল সেই অভিযোগের উপর ঘটনার বিবরণাদি বিবেচনাপূর্ণক পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যতীত সাময়িক বরখাস্তের আদেশটি এর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কারণে আর পুনর্জীবিত হবে না বা তা নিজে থেকে পুনর্জীবিত হয়েছে বলে গণ্য হবে না।
বিভাগীয় মামলা অনিষ্পন্ন (pending) থাকাকালীন সময়ে সাময়িক বরখাস্তকৃত কোন সরকারি কর্মচারী বিভাগীয় মামলার ফলশ্রুতিতে চাকরিতে বহাল হলে কর্তৃপক্ষ সেইক্ষেত্রে তার সাময়িক বরখাস্তকালীন সময় কি হিসাবে গণ্য করবেন তা বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস (১ম খণ্ড) এর ৭২ বিধি মোতাবেক নির্ধারণ করতে ক্ষমতাবান। এইক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীর পুনর্বহাল আদেশের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। ফলে স্বতন্ত্র কোন আদেশের দ্বারা সাময়িক বরখাস্তের আদেশটি বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। পুনঃতদন্তের ক্ষেত্র ব্যতীত চাকুরীচ্যুতি বা চাকুরী হতে অপসারণের আদেশ রদ হলে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ পুনর্জীবিত হবে না, কিন্তু কোন কারণে পুনর্বহালের আদেশটি রদ হলে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ পুনর্জীবিত হবে। কারণ চাকুরী হতে অপসারণও পুনর্বহাল আদেশের চরিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র। অপেক্ষমাণ বিভাগীয় মামলায় সাময়িক বরখাস্ত থেকে বিভাগীয় মামলার শাস্তি হিসাবে চাকুরী হতে অপসারিত হলে তিনি সঙ্গত কারণেই আর চাকুরীতে ফিরে আসেন না বিধায় উক্ত অপসারণের আদেশের মধ্যে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বিলীন হয়ে যায়। ফলে উক্ত সরকারি কর্মচারীর সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে আর কিছুই করণীয় থাকে না। কিন্তু পুনর্বহালের ক্ষেত্রে পুনর্বহালের আদেশের কারণে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারী চাকুরীতে প্রত্যাবর্তন করেন। তাই কর্তৃপক্ষকে তার সাময়িক বরখাস্তকালীন সময় কিভাবে গণ্য করা হবে সেই বিষয়ে অতিরিক্ত আদেশ (সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের নয়) জারি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়( জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) আইন মন্ত্রণালয়ের উপরোক্ত অভিমতের সাথে একমত পোষণ করেছেন। (সূত্র: চাকুরীর বিধিমালা: বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া)
সাময়িক বরখাস্তকালীন প্রাপ্য সুবিধাদি
সাময়িক বরখাস্ত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী কিছু সুবিধার (বেতন, ক্ষতিপূরণ ভাতা, উৎসব ভাতা, ছুটি ইত্যাদি) প্রাপ্যতা থাকে যা নিচে আলোচনা করা হলো—-
ক) বেতনভাতা: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ED(RegIV)-202/83-39 তারিখ: ১০/০৫/১৯৮৩ খ্রিঃ অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় নিম্নোক্ত সুবিধা প্রাপ্য হবেন—
১) সাময়িক বরখাস্ত আদেশের পূর্বে প্রাপ্ত মূল বেতনের অর্ধেক সাবসিসটেন্স গ্রান্ট/খোরপোষ/খোরাকী/জীবন নির্বাহভাতা প্রাপ্ত হবেন। [সূত্র: BSR Part-1 এর ৭১ এবং Fundamental Rules (FR-53 (B)] সাময়িক বরখাস্তকালে নতুন বেতন স্কেল ঘোষণার ক্ষেত্রে নতুন বেতন স্কেলের ভিত্তিতে খোরাকী ভাতা নির্ধারণ করিতে হবে।
২) সাময়িক বরখাস্তের পূর্বের উত্তোলিত হারে পূর্ণ বাড়ী ভাড়া ভাতা। [সূত্র: Finance Division Memo No. MF/R-11/HR-1/77-260 (500) Dated 25.9.78]
৩) সাময়িক বরখাস্তের পূর্বের হারে বাড়ী ভাড়া প্রদানের ভিত্তিতে সরকারি বাসভবনে বসবাস করতে পারবেন।
৪) সাময়িক বরখাস্তের পূর্বের উত্তোলিত হারে পূর্ণ চিকিৎসা ভাতা পাবেন।[সূত্র: Memo quoted in clause (2) of para-2 above]
৫) সাময়িক বরখাস্তের পূর্বের প্রাপ্য মহার্ঘ ভাতার অর্ধেক প্রাপ্য হবেন।[সূত্র:Finance Division O.M. No অঃ মঃ/প্রবি-২/ভাতা-৮/৮২/৩৩ তারিখ ২২-৯-৮২]
[তবে অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এর অধীন বাস্তবায়ন অনুবিভাগ এর ১৫/১২/২০১৫তারিখের গেজেট মূলে অষ্টম বেতন কাঠামোর আওতায় চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ ২০১৫ জারী করা হয়। উক্ত আদেশের অনুচ্ছেদ ১(৩) (ঘ) অনুযায়ী, জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ কার্যকর হবার তারিখ হতে মহার্ঘভাতা বিলুপ্ত হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং ০১/০৭/২০১৫ তারিখ হতে ইতোমধ্যে আহরিত মহার্ঘভাতা প্রাপ্য বকেয়ার সাথে সমন্বয় হবে]
খ) ক্ষতিপূরণ ভাতা: অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২৪/০৬/১৯৮০খ্রিঃ তারিখের স্মারক নং অঃমঃ/প্রাবি-২/ভাতা-৮/৮০-১৬০ অনুসারে সরকারি কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় ক্ষতিপূরণ পূর্ণহারে প্রাপ্য হবেন।
গ) উৎসব ভাতা: সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় সরকারি কর্মচারীগণের সাময়িক বরখাস্তের অব্যবহিত পূর্বে আহরিত মূল বেতনের যে অংশ খোরাকি ভাতা (Subsistence Allowance) হিসাবে প্রাপ্য যে অংশের সমান উৎসব ভাতা পাবেন। (সূত্র: অর্থ বিভাগের স্মারক নং- অম-অবি(বা)৪-এফ, বি-১২-৮৪ (অংশ)/১০৭, তারিখ: ৩০/০৭/১৯৮৪)
ঘ) উৎসব ভাতার বকেয়া: সাময়িক বরখাস্তকালকে পরবর্তী সময়ে কর্তব্য কর্মেরত হিসাবে গণ্য করে বিধি অনুসারে বকেয়া বেতন ও ভাতা প্রদান করা হলে, সে ক্ষেত্রে উৎসব ভাতার বকেয়া পাবেন। (সূত্র: অর্থ বিভাগের স্মারক নং- এম, এফ/এফ-ডি(ইমপ্লি)-৪-এফ-বি/১২/৮৪/১১৫, তারিখ: ৩০/০৯/১৯৮৫)
সাময়িক বরখাস্তকালীন কোন কোন সুবিধা প্রাপ্য নয়
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর ED(Reg-IV)-202/83-39 তারিখ ১০/০৫/১৯৮৩ অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় নিম্নোক্ত সুবিধা প্রাপ্য হবেন না—
১) সংশ্লিষ্ট কর্মচারী যেহেতু দাপ্তরিক কাজ করেন না, সেহেতু ভ্রমণভাতা পাবেন না;
২) সাময়িক বরখাস্তকালীন টেলিফোন, খবরের কাগজ/পত্রিকা, অর্ডারলী, আপ্যায়নভাতা প্রাপ্য হবেন না;
৩) সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন সরকারি গাড়ী/যানবাহন প্রাপ্য হবেন না;
৪) কোন প্রকার ছুটি প্রাপ্য হবেন না;এবং
৫) সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন সময় টিফিনভাতা, ধোলাইভাতা প্রাপ্য হবেন না।
[সূত্র: সম (বিধি-৪) বিবিধ-৮১/৮৮-১ (২০০) তারিখ ১-১-৮৯ইং]
সাময়িক বরখাস্ত থাকার সময়ে কর্তৃপক্ষ এবং বরখাস্তকৃত কর্মচারীর দায়িত্ব ও করণীয় কার্যাদি
সাময়িক বরখাস্ত থাকার সময়ে কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর দায়িত্ব ও করণীয় কার্যাদি সম্পর্কে যে সকল বিধান রয়েছে, তা নিম্নে তুলে ধরা হলো—
(ক) সাময়িক বরখাস্তকালে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে ছুটি প্রদান করা যাবে না। (সূত্র: বি এস আর- ৭৪)
(খ) ছুটিতে থাকা অবস্থায় কোন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হলে, সাময়িক বরখাস্তের আদেশদানের তারিখ হতে ছুটি বাতিল হবে।
(গ) সাময়িক বরখাস্ত থাকার সময়ের জন্য কোন সরকারী কর্মচারীর বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন লেখার প্রয়োজন হয় না। বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে সংশ্লিষ্ট অফিস আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি ডোসিয়ারে রাখার বিধান রয়েছে। [সূত্র: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১ আগস্ট, ১৯৮৭ তারিখের স্মারক নং সম(সি আর/সিপি-৩)-৬/৮৬-১২১(৬১০)]
(ঘ) সাময়িক বরখাস্তকালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজস্ব পদটি দখল করে থাকে। অর্থাৎ উক্ত পদটি পদশূন্য হিসাবে বিবেচিত হয় না বিধায় ঐ পদে নতুন লোক নিয়োগ করা যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে অত্যাবশ্যকীয় হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে এই উদ্দেশ্যে সুপারনিউমারি পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে। কিন্তু সাময়িক বরখাস্তকৃত ব্যক্তির সাময়িক বরখাস্তের মেয়াদ শেষ হওয়ার বা চাকরিতে পুনর্বহাল হওয়ার সংগে সংগে সুপারনিউমারি পদটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। [সূত্র: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭০ তারিখের স্মারক নম্বর R-III/IS-138/69(50)]
(ঙ) সাময়িক বরখাস্তকালে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী কর্মস্থলেই অবস্থান করবে এবং কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতীত অন্যত্র যেতে পারবেন না।[সূত্র: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৮০ তারিখের স্মারক নং ED(Reg-VI)S-93/79- 87(500)]
(চ) সাময়িক বরখাস্ত থাকার সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী অন্য কোন চাকরি বা পেশা গ্রহণ করতে পারবেন না।
সাময়িক বরখাস্তের আরো কিছু বিধান
১. সাময়িক বরখাস্ত শাস্তি নয়
সাময়িক বরখাস্ত শাস্তি নয়। সাময়িক বরখাস্তের কোন আদেশ, অভিযুক্ত দোষী প্রমাণিত হওয়ার প্রেক্ষিতে দন্ড আরোপের আদেশ নয়। আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পূর্বে বিভাগীয় মামলা নির্ঝঞ্চাটে নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। জনস্বার্থে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর স্বার্থে এইক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা দ্রুত শেষ করতে হয়।(সূত্র: P.L. Shah v. Union of India, (1989) 1 SCC 546)
২. সাময়িক বরখাস্তের ক্ষমতা
নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় মামলা অনিষ্পত্তিকৃত থাকা অবস্থায়, এমনকি মামলা নিষ্পত্তির পরও কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারেন(Suroj Kumar Datta v. State of West Bengal, AIR 1959 Cal 294)। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সাময়িক বরখাস্ত করার ক্ষমতা রয়েছে।[Union of India v. Baijnath, 1972 Serv LR 382 at p. 384 (DB)] সাময়িক বরখাস্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অধঃস্তন কর্তৃপক্ষও সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিতে পারেন।[Saila Behari v. State of Orissa, AIR 1966 Orissa 150] কর্মচারীর আচরণ সংক্রান্ত তদন্ত অনিষ্পত্তিকৃত থাকা অবস্থায় সরকারের উক্ত কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের সাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করতে পারেন।(AIR 1964 SC 787: (1966) 2 LLJ 164)
৩. সাময়িক বরখাস্তের আদেশ কার্যকর হওয়া
কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রেরণ না করা পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্তের আদেশ কার্যকর হবে না। কারণ প্রেরণের পূর্বে কর্তৃপক্ষ উক্ত আদেশ সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারেন(AIR 1966 SCC 1313)।
৪. সাময়িক বরখাস্ত যখন ইচ্ছাধীন
সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি-৩ এর অনুচ্ছেদ (খ), (গ) বা (ঘ) এর অধীনে অর্থাৎ অসদাচরণ বা ডিজারসন বা দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ও যুক্তিযুক্ত মনে করলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে বিধি-১২ এর বিধানমতে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারেন। এইক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্তকরণ কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাধীন।
৫. বিভাগীয় মামলা গ্রহণের পূর্বে সাময়িক বরখাস্তকরণ
প্রাথমিক তদন্তের পর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ অভিযুক্তকে অবহিত করার পূর্বে সরকার কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারেন। কারণ কোন কর্মচারীর বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ আরোপের ক্ষেত্রে তাকে পদের দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া কাম্য নয়।[(1971) 1 SCC 734 AIR 1971 SC 823] বিভাগীয় মামলা রুজু করার পূর্বেও সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া যায়। তবে তা কোন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং অত্যাবশ্যকীয় হতে হবে।
৬. বিভাগীয় মামলা গ্রহণ না করে সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় রাখা
বিভাগীয় মামলা রুজু না করে অযৌক্তিকভাবে অনির্দিষ্ট দীর্ঘকাল সাময়িক বরখাস্ত করে রাখা সাময়িক বরখাস্তকারী কর্তৃপক্ষের দূরভিসন্ধিমূলক ইচ্ছার প্রকাশ, যা ন্যায় বিচারের স্বার্থে বহাল রাখা যায় না।[Abdul Hashim Vs. Chairman, National Board of Revenue, Dacca & ors, (1980)] তাছাড়া বিভাগীয় মামলা রুজু ও সাময়িক বরখাস্ত একই কর্তৃপক্ষ করার জন্য ক্ষমতাবান।[Saifuddin Malik Vs. The Government of West Pakistan, (1969) 21 PLD (lahore)]
৭. সাময়িক বরখাস্তের আদেশের ফলশ্রুতি
সাময়িক বরখাস্তের আদেশের প্রকৃত ফলাফল হচ্ছে কর্মচারী চাকরিতে বহাল থাকলেও কাজ করার অনুমতিপ্রাপ্ত নয়, তবে খোরাকি ভাতা প্রাপ্য, যার পরিমাণ বেতন অপেক্ষা কম(Khem Chand v. Union of India, AIR 1963 SC 687)। সাময়িক বরখাস্তের দ্বারা কর্ম হতে সাময়িক বিরত রাখা হলেও বরখাস্তকৃত ব্যক্তি চাকরিতে বহাল থাকে এবং পদমর্যাদারও হানি ঘটে না। বরখাস্তকৃত কর্মচারীকে কোন কাজ করার বা কোন দায়িত্ব পালন করার জন্য বলা যায় না।[(1986) 1 ATC 537 (CAT)]
৮. সাময়িক বরখাস্তকালকে কর্মকাল হিসাবে গণনা
বিভাগীয় মামলা দায়েরের কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে এবং পরবর্তী পর্যায়ে বিভাগীয় মামলা প্রত্যাহার করা হলে বা বিভাগীয় মামলার কার্যক্রম পরিচালনা হতে বিরত থাকলে সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ের জন্য পূর্ণ বেতন ভাতাদি পাওয়ার অধিকারী হবেন(Gurdeep Singh v. Union of India, (1982) 1 SCC 505: AIR 1982 SC 1176)।
বিভাগীয় মামলার চূড়ান্ত আদেশে অবশ্যই সাময়িক বরাখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের কিংবা শাস্তি/অব্যাহতি প্রদান করা হলে সাময়িক বরখাস্তকালীন সময় কি হিসাবে গণ্য করা হবে তা উল্লেখ করতে হবে(সম (বিধি-৪)-শৃঃ আঃ ৪৯/২০০৯-৩৫০, তারিখঃ ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯)।
৯. ভূতাপেক্ষভাবে সাময়িক বরখাস্তকরণ
ভূতাপেক্ষভাবে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া যায় না। ভূতাপেক্ষভাবে সাময়িক বরখাস্তকরণ বেআইনী।[Hemanta Kumar v. S.N.Mukharjee, AIR 1954 Cal 340 at p. 343: 58 Cal WN1(DB)]
১০.সাময়িক বরখাস্তের ক্ষেত্রে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিকরণ
সাময়িক বরখাস্তের ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেমন অর্থকষ্টে পতিত হয়, ঠিক তেমনি সরকারকেও সময়, দক্ষতা এবং আর্থিক অপচয়ের সম্মুখীন হতে হয়, তাই সাময়িক বরখাস্তের ক্ষেত্রে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।[No.DI-38/74-413(40), dated 11th June, 197]
১১. সাময়িক বরখাস্তকালে ছুটি প্রদান
সাময়িক বরখাস্ত থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে ছুটি প্রদান করা যাবে না। তবে সাময়িক বরখাস্তের মেয়াদান্তে সাময়িক বরখাস্তকালকে ছুটি হিসাবে মঞ্জুর করা যাবে।(Bangladesh Service Rules, Part-1, rule 74)
সাময়িক বরখাস্ত থাকা অবস্থায় কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে উক্ত সময়কালকে কর্মকাল হিসাবে গণ্য করে উক্ত সময়ের বকেয়া বেতন ভাতাদি প্রদান করা যাবে না। তবে উক্ত সময়ের ছুটি মঞ্জুর বা ছুটি পাওনা না থাকার ক্ষেত্রে অসাধারণ ছুটি(Extraordinary leave) মঞ্জুর করা যাবে।
১২. সাময়িক বরখাস্তের অনুবৃত্তিক্রমে বাধ্যতামূলক অবসর
সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ১৩(১) বিধি অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তের আদেশের অনুবৃত্তিক্রমে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হলে, সাময়িক বরখাস্তকাল ক্ষতিপূরণ পেনশন বা আনুতোষিক বা ভবিষ্য তহবিলের সুবিধাদি প্রদানের ক্ষেত্রে গণনাযোগ্য হবে না।
১৩. সাময়িক বরখাস্তকাল পেনশনের জন্য গণনা
আচরণ সম্পর্কে তদন্ত চলমান অবস্থায় সাময়িক বরখাস্ত করা হলে এবং পরবর্তী পর্যায়ে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হলে অথবা বাধ্যতামূলকভাবে অবসর দেওয়া হলে, সাময়িক বরখাস্তকাল পেনশনযোগ্য চাকরি হিসাবে গণ্য হবে।" তবে আচরণ সম্পর্কে তদন্ত চলমান অবস্থায় সাময়িক বরখাস্তকৃত কোন কর্মচারীকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হলে এবং সাময়িক বরখাস্তকালের ভাতাদির কোন অংশ বাজেয়াপ্ত করা হলে উক্ত সাময়িক বরখাস্তকাল পেনশনের জন্য গণনা করা হবে না, যদি না পুনর্বহালকারী কর্তৃপক্ষ উক্ত সময় পেনশনের জন্য গণনার বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দেন।
১৪. সাময়িক বরখাস্ত থাকা অবস্থায় এ সি আর লিখন
সাময়িক বরখাস্তকালের জন্য কোন সরকারী কর্মচারীর বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনের প্রয়োজন হবে না। এ সি আর এর স্থলে সংশ্লিষ্ট অফিস আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি রেকর্ড সংরক্ষনের নথিতে অর্থাৎ ডোসিয়ারে( Dossier) রাখা হবে।
১৫.দ্বিতীয়বার সাময়িক বরখাস্ত
সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারে পর যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পূর্বানুমোদনের ভিত্তিতে দ্বিতীয়বার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ অবৈধ নয়।[Saifuddin Malik Vs. The Government of West Pakistan, (1969) 21 PLD (lahore)]
১৬. সাময়িক বরখাস্ত প্রশাসনিক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত
বিভাগীয় মামলা আধা-বিচারিক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হলেও সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রশাসনিক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। যার কারণে সাময়িক বরখাস্তের আদেশদানের ক্ষেত্রে আধা-বিচারিক কার্যক্রমের পদ্ধতি গ্রহণের প্রয়োজন হয় না। সাময়িক বরখাস্ত চাকরি হতে বরখাস্ত বা চাকরি হইতে অপসারণের পর্যায়ভুক্ত নয়।
১৭. সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মচারীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে
সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মচারী সাময়িক বরখাস্তরত অবস্থায় অথবা বিভাগীয় মামলা চলমান অবস্থায় অথবা বিভাগীয় মামলা আরম্ভের পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে সাময়িক বরখাস্তের দিন হতে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সময়কাল কর্মকাল হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং উক্ত কর্মচারীর পরিবার উক্ত বরখাস্তকালের পূর্ণ বেতন ভাতাদি পাবেন। কেননা মৃত্যুর ক্ষেত্রে বরখাস্তকৃত কর্মচারীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকে না।
১৮. চাকরিচ্যুতি, অপসারণ বা বাধ্যতামূলক অবসরদানের আদেশ আদালত কর্তৃক বাতিল হওয়ার পর পুনঃ তদন্তের ক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্ত
সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ১২ এর উপবিধি (২) এর বিধানমতে চাকরি হতে বরখাস্ত, অপসারণ বা বাধ্যতামূলক অবসরদানের আদেশ কোন আদালত বা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বাতিল হলে কর্তৃপক্ষ মামলার অবস্থাদি বিবেচনা পূর্বক বিষয়টি পুনঃ তদন্ত করতে পারবেন। কর্তৃপক্ষ যদি পুনঃ তদন্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তবে প্রথম যে তারিখ হতে চাকরি হতে বরখাস্ত বা অপসারণ বা বাধ্যতামূলক অবসরদানের দন্ড আরোপ করা হয়েছিল, ঐ তারিখ হতে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত আছেন বলে গণ্য হবে এবং পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকবে।
১৯. সাময়িক বরখাস্তের পর পুনর্বহাল
সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি-১৪(২) এর বিধানমতে সাময়িক বরখাস্তের পর পদে পুনর্বহাল বাংলাদেশ সার্ভিস রুলের বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
সাময়িক বরখাস্তকৃত কোন কর্মচারীর সাময়িক বরখাস্ত অন্যায্য হলে বা সম্পূর্ণ ন্যায় সংগত না হলে দন্ড আরোপকারী কর্তৃপক্ষ, আপীলেট কর্তৃপক্ষ(Appellate Authority) বা আদেশ সংশোধনকারী কর্তৃপক্ষ উক্ত কর্মচারীকে নিম্নোক্ত সুবিধাদি মঞ্জুর করতে পারবেন—
(ক) অভিযোগ হতে সসম্মানে অব্যাহতির ক্ষেত্রে পূর্ণ বেতন ও ভাতাদি মঞ্জুর করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অনুপস্থিতকাল কর্মকাল হিসেবে গণ্য হবে।
(খ) সসম্মানে অব্যাহতি ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে বেতন ও ভাতাদির কি পরিমাণ প্রদান করা হবে, সে সম্পর্কে আদেশ দিতে হবে। তাছাড়া অনুপস্থিতকাল কর্মকাল হিসেবে নাকি ছুটি হিসেবে গণ্য হবে, সে সম্পর্কেও আদেশ দিতে হবে। ছুটি হিসেবে গণ্য করা হলে, উক্ত ছুটি 'ছুটির হিসাব' হতে বাদ যাবে। প্রদত্ত খোরাকী ভাতা ছুটিকালীন বেতনের সাথে সমন্বয় করতে হবে। তবে এই সময়কে অসাধারণ ছুটি হিসেবে গণ্য করা হলে ইতোমধ্যে প্রদানকৃত খোরাকী ভাতা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিকট হতে আদায় করা যাবে না।(Bangladesh service Rules, Part-1, rule 72 & Fundamental Rules, rule 54)
২০. আদালত কর্তৃক সসম্মানে অব্যাহতির ক্ষেত্রে বেতন ভাতাদি প্রদান
আদালতের রায়ে সসম্মানে অভিযোগ হতে অব্যাহতি দেওয়া হলে BSR 72(a) বিধি মোতাবেক বরখাস্তকালকে কর্মকাল হিসেবে গণ্য করে বকেয়া বেতন ভাতাদির বিষয়টি মীমাংসা করা যায়।(সূত্র: সম/বিধি-৩/বেতন-৫/৯২-৪৪, তারিখঃ ২০ অক্টোবর, ১৯৯২)
২১. ফৌজদারী অভিযোগের ক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্ত
কোন কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধের অভিযোগ তদন্তাধীন থাকলে কিংবা ফৌজদারী মামলা বিচারাধীন থাকলে সাময়িক বরখাস্ত করা যায়। উল্লেখ্য কোন ভিত্তি ছাড়া কোন কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত করা যায় না, সাময়িক বরখাস্তের জন্য সাময়িক বরখাস্তের আদেশদানের প্রয়োজন হবে।
ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে এবং সাজাপ্রাপ্তিতে চাকরি হতে বরখাস্ত করা হলে যদি আপীলে ফৌজদারী মামলায় খালাস পায় তবে সাময়িক বরখাস্তকালের পূর্ণবেতন পাবেন।(Brahma Chandra Gupta v. Union of India, (1984) 2 SCC 433: AIR 1984 SC, 380)
সাধারণ নীতি অনুসারে অন্যান্য নিয়োগকর্তার মতো সরকারেরও বিভাগীয় মামলার কারণে অথবা ফৌজদারী মামলার কারণে কোন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের অধিকার রয়েছে(AIR 1964 SC 787)।
ফৌজদারী মামলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত হলে এবং উক্ত ফৌজদানী মামলা হতে খালাস পেলে সাময়িক বরখাস্তকালের পূর্ণবেতন ভাতাদি পাওয়ার অধিকারী হবেন।(AIR 1967 Punj 422)
ফৌজদারী সি আর বা কমপ্লেইন্ট রেজিস্ট্রার মামলা(আদালতে দায়েরকৃত মামলা) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে চাকরিতে পুনর্বহালের সুযোগ নেই।(স্মারক নম্বর-০৫.১৭৩.০১৩.০২.০০.০০৩.২০১০-৩৯৭.৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০)
মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিভিশন মামলা এর ক্রিমিনাল আপীল মামলা বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় পুনরায় সাময়িক বরখাস্ত করা যুক্তিযুক্ত নয়।(স্মারক নম্বর-০৫.১৭৩.০২৭.০৭.০০.০০১.২০১০-৫১৪, ২২ ডিসেম্বর, ২০১০)
BSR Rules পার্ট-১ এর বিধি ৭৩ এর মর্মানুসারে কোন কর্মচারী ফৌজদারী অপরাধের কারণে গ্রেফতার হলে অথবা কোর্টে আত্মসমর্পন করলে ঐ দিন হতে উক্ত কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত হবেন। এইক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্ত করা যুক্তিযুক্ত। এক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের সাময়িক বরখাস্তের ফরমাল আদেশ জারি করতে হবে। পাশাপাশি উক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিস মেমোরেন্ডাম নং-ইডি (রেগ-৬) ১২৩/৭৮-১১৫(৫০০), তারিখঃ ২১/১১/১৯৭৮ ইং মোতাবেক কোন কর্মচারী গ্রেফতারের বা আত্মসমর্পনের পর জামিনে মুক্তি লাভ করলেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা যুক্তিযুক্ত। এইক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায়ই থাকবেন (সম(বিধি-৪)-শৃঃ আঃ ৪৩/০৯-৩৩৭, তারিখঃ ০২ সেপ্টেম্বর, ২০০৯)।
২২. বিভাগীয় মামলা প্রত্যাহার
বিভাগীয় মামলা প্রত্যাহার করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী পূর্ণবেতন ভাতাদি এবং বিধি মোতাবেক প্রাপ্য অন্যান্য সুবিধাদি এমনভাবে পাওয়ার অধিকারী হবে যে তার বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় মামলা গ্রহণ করা হয়নি। (Gurdeep Singh v. Union of India, (1982) | SCC 505: AIR 1982 SC 1176)। আনীত অভিযোগ হতে অব্যাহতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী পূর্ণবেতন প্রাপ্তিতে বঞ্চিত করা যাবে না।
২৩. সাময়িক বরখাস্তকালকে কর্মকাল হিসাবে গণনা
কোন কর্মচারীকে অনুপস্থিতির কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে এবং পরবর্তী পর্যায়ে উক্ত অনুপস্থিতকালকে নিয়মিত করা হলে সাময়িক বরখাস্ত আদেশ অন্যায্য বলে বিবেচিত হবে এবং সাময়িক বরখাস্তকাল কর্মকাল হিসেবে গণ্য হবে।(Ram Kanwar v. Union of India, (1989) 9 ATC 33)
২৪. অবসর-উত্তর ছুটি ভোগরত অবস্থায় সাময়িক বরখাস্ত
অবসর-উত্তর ছুটিভোগরত কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা যায় না। কারণ সাময়িক বরখাস্ত অর্থ কোন কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনে বিরত রাখা, কিন্তু একজন কর্মচারী অবসর-উত্তর ছুটিকালে কোন দায়িত্বে থাকেন না বিধায় সাময়িক বরখাস্ত এক্ষেত্রে কার্যকর নয়।(Pratap Sing v. State of Punjub, AIR 1964 SC 72)
২৫. বরখাস্তকৃত কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে বিলম্ব
সাময়িক বরখাস্তের পর যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে অভিযোগ গঠন করতে হবে। সাময়িক বরখাস্তের পর ০৫ বছরের বেশি সময় তদন্ত না করার ক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ অবৈধ।(সূত্র: Sunadana Rao v. Government of Andhra Pradesh. (1971) 2 APLJ 476)
সাময়িক বরখাস্তের ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেমন অর্থ কষ্টে পতিত হয়, ঠিক তেমনি সরকারকেও সময়, দক্ষতা এবং আর্থিক অপচয়ের সম্মুখীন হতে হয় বিধায় সাময়িক বরখাস্তের ক্ষেত্রে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। (স্মারক নম্বর-D1-38/78-413(40) তারিখের dated 11th June, 1947)।
২৬. সাময়িক বরখাস্তের আদেশ আদালত কর্তৃক কোয়াশ করা
সাময়িক বরখাস্তের আদেশ আদালত বাতিল (quashed) করলে কর্মচারী সাময়িক বরখাস্তকালের জন্য পূর্ণ বেতন ভাতাদি পাওয়ার অধিকারী হবেন। এইক্ষেত্রে আপীল দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে– কারণ দেখিয়ে সরকার বেতন ভাতাদি প্রদান স্থগিত রাখতে পারে না। (AIR 1967 Pat 318)
২৭. সাময়িক বরখাস্ত বহাল থাকা অবস্থায় যোগদান
সাময়িক বরখাস্ত বহাল থাকাবস্থায় কর্মে যোগদানের কোন সুযোগ নেই এবং সাময়িক বরখাস্তকালে খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য[সম(বিধি-৪)-বিবিধ-৫/২০০৯-৯০, তারিখঃ ১২ মার্চ, ২০০৯]
২৮. সাময়িক বরখাস্তকালকে ছুটি হিসাবে গণ্য করা
বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্তে অসদাচরণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে ২ বছরের জন্য পদোন্নতি স্থগিত ও বরখাস্তকাল অসাধারণ ছুটি হিসাবে গণ্য করে এবং বরখাস্তকালে যে বেতন ভাতাদি গ্রহণ করেছেন তার অতিরিক্ত কোন অর্থ প্রদান করা হবে না– মর্মে দন্ডাদেশ প্রদান করা হয়। উক্ত দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে পুনঃবিবেচনার রাষ্ট্রপতির নিকট আবেদন করা হয় নি। এই অবস্থায় বরখাস্তকালকে সাধারণ ছুটি হিসাবে গণ্য করার কোন সুযোগ নেই।[সম(বিধি-৪)-ছুটি-৮/২০০৯-২৮০, তারিখঃ ১৪ জুলাই, ২০০৯]
২৯. সাময়িক বরখাস্তকালে সরকারি স্টেশনারী ও ডাক টিকেট ব্যবহার
সাময়িক বরখাস্তকালে অভিযোগের জবাব প্রদান বা আত্মপক্ষ সমর্থনের উদ্দেশ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত সরকারি স্টেশনারী এবং সরকারি ডাক টিকেট ব্যবহার করতে পারবেন না। এইক্ষেত্রে আত্মপক্ষ সমর্থনের উদ্দেশ্যে স্টেশনারী ও ডাক টিকেটের খরচ অভিযুক্ত নিজে বহন করবেন। [সূত্র-OM. No.2/29/67-DI. dated 8th January, 1968 (E.M-1947-67, p-321]
৩০.সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার
জামিনপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় রাখাই যুক্তিযুক্ত ও উচিত। প্রশাসনিক কারণে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনা করে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে—
(ক) সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা/কর্মচারীর সাময়িক বরখাস্ত আদেশ বাতিল করা হলে তাকে আদালতে হাজিরার দিন বাধ্যতামূলকভাবে ছুটি দেওয়ার প্রয়োজন হবে; এবং
(খ) তাছাড়া আদালত কোন কারণে জামিন বাতিল করলে সেক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হবে।[সম(বিধি-৪)-শৃঃ আঃ ৬১/২০০৯-৪৯০, তারিখঃ ২৭ ডিসেম্বর, ২০০৯]
সাময়িক বরখাস্তের প্রত্যাহারের বা বাতিলের আদেশে 'অবিলম্বে কার্যকর হইবে' উল্লেখ থাকলে সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহারের বা বাতিলের আদেশ জারির তারিখ হতে প্রত্যাহার বা বাতিল হয়েছে বলে গণ্য হবে। [AIR 1967 Punj 417]
UP. Rajya Krishi Utpadan Mandi Parishad v. Sanjiv Rajan, 1993 Supp (3) SCC 483: (1993) 25 ATC 764 মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে, কেবল অভিযোগনামা প্রণয়নে বিলম্ব সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারে জন্য যথেষ্ট যুক্তি নয়।
সকল ফৌজদারী মামলা এবং বিভাগীয় মামলা হতে খালাস/অব্যাহতি পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যকোন অভিযোগ না থাকলে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের কোন বাঁধা নেই [সম (বিধি-৪)-শৃঃ আঃ ৩৮/২০০৯-২৮৯, তারিখঃ ২১ জুলাই, ২০০৯]।
Government of A.P.V. V. Sivaraman, (1990) 3 SCC 57: 1990 SCC (L&S) 443: AIR 1990 SC 1157 মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে, সাময়িক বরখাস্তের আদেশ কোন ভিত্তি ছাড়া প্রত্যাহার হয় না। সাময়িক বরখাস্ত করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত সমাপ্তের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে উক্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলেও সাময়িক বরখাস্তের আদেশ নিজে থেকেই প্রত্যাহার হয়েছে বলে গণ্য করা যাবে না। সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার বা বাতিলের আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে।
মামলা এবং অভিযোগ হতে খালাস/অব্যাহতি পাওয়ার ক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারে বাঁধা নেই।[সম(বিধি-৪)-শৃঃ আঃ ৬৩/২০০৯-৪৮৪, তারিখঃ ২৩ ডিসেম্বর, ২০০৯] এ প্রসংগে Mostafa Issat Ali Chowdhury Vs. Government of Bangladesh and others; 2BLD(HCD)1009 মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে,সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার দ্বারা অভিযোগ প্রত্যাহার ও তদন্ত বন্ধও বুঝাবে।"
৩১. সাময়িক বরখাস্তের পরিসমাপ্তি
অভিযুক্তের অব্যাহতি প্রদান বা দন্ড আরোপ পূর্বক যেভাবেই বিভাগীয় মামলার নিষ্পত্তি হোক না কেন সাময়িক বরখাস্তের পরিসমাপ্তি ঘটে (AIR 1955 SC 600 at p. 603)। অর্থাৎ বিভাগীয় মামলার নিষ্পত্তির সংগে সংগে সাময়িক বরখাস্ত আদেশ কার্যকারিতা হারায়।
Sources:
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮:www.bdlaws.minlaw.gov.bd;
সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা-ও-আপিল) বিধিমালা-২০১৮;
বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস পার্ট - ১ ও পার্ট-২;
বাংলাদেশের চাকুরী আইন :মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া;
চাকরির বিধানাবলী: মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া;
চাকুরীর বিধিমালা:বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া
0 Comments